সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাশেম পরিবারে কেউ জনপ্রিয় হলেই খুন

বাবার পর হত্যার শিকার দুই ছেলেও

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

আতঙ্ক কাটেনি খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠু পরিবারের। ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন একই পরিবারের তিন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। তবে বাবা ও ভাইয়ের মতো আলাউদ্দিন মিঠুর একই পরিণতি হওয়ায় ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার। ফুলতলার ঐতিহ্যবাহী এই চেয়ারম্যান পরিবারের সদস্যদের চোখেমুখে কেবলই হতাশা আর আতঙ্ক। নিহতের স্ত্রী জোবায়দা খান সুরভী বলেন, ‘এই বাড়িতে এখন কারও নিরাপত্তা নেই। এরপর কার রক্ত ঝরবে জানি না। দুর্বৃত্তরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢুকে গুলি করে চলে গেল। অথচ পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।’

ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড : খুলনার ফুলতলা উপজেলার প্রভাবশালী সরদার পরিবারের সদস্য তিন জনপ্রতিনিধি ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। প্রথম খুনের শিকার হন ১৯৯৮ সালের ১৮ আগস্ট আলাউদ্দিন মিঠুর বাবা দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সরদার। তাকে দিনদুপুরে ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের মধ্যে চরমপন্থিরা গুলি করে হত্যা করে। এরপর ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট তার বড় ভাই একই ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ বাদলও দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। সর্বশেষ ২৫ মে রাতে দেহরক্ষীসহ ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠুকে তার কার্যালয়ের মধ্যেই গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

পূর্বের হত্যা মামলা : ১৯৯৮ সালে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সরদার হত্যা মামলায় চরমপন্থি নেতাসহ বেশ কয়েকজন আসামি ছিল। মামলার রায়ে চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুইয়া, তার ভাই শরিফ মো. ভুইয়া শিবলু ও মোমিনুল ভুইয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অবশ্য আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। এর মধ্যে শরিফ মো. ভুইয়া শিবলু বর্তমানে দামোদর ইউনিয়র পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। অপরদিকে ২০১০ সালে আবু সাঈদ বাদল হত্যাকাণ্ডে দায়ের হওয়া মামলাটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) তদন্তাধীন রয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ নড়াইল জেলা সদরের গোবরা বাজার থেকে জনযুদ্ধ ক্যাডার আল মামুন ওরফে বোমারু মামুনকে গ্রেফতার করে। পরদিন মামুন আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে তিনি এবং জনযুদ্ধের পিটপিটে সুমন, বিপুল বৈরাগী, রাজুসহ পাঁচজন অংশ নেন। তাদের কারও সঙ্গেই চেয়ারম্যান বাদলের ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা ছিল না। টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। হত্যা মামলাটি তদন্ত শেষে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সিআইডি। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি পিটিশন দিয়েছিলেন আলাউদ্দিন মিঠু। তিনি এই দুই হত্যা মামলার বাদী ছিলেন।

কেন এই হত্যাকাণ্ড : ব্যক্তি আক্রোশের বিষয় নয়, উপজেলাব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে একই পরিবারের সদস্যদের এভাবে একের পর এক পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। নিহত মিঠুর মেঝ ভাই সেলিম সরদার বলেন, উপজেলায় জনপ্রিয়তার কারণেই তার পিতা ও ভাইদের খুন করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আর কত রক্ত ঝরলে প্রশাসন খুনিদের গ্রেফতারে তত্পর হবে। সেলিম সরদার বলেন, ‘বাবা ও বড় ভাই খুন হওয়ার পর বাড়ির সামনে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছিল। পরে ওই ক্যাম্প উঠিয়ে নেওয়া হয়। এখন আমাদের বাড়ির কারও কোনো নিরাপত্তা নেই।’ এ খুনের বিষয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিপুল ভোটে নির্বাচিত একটি জনপ্রিয় পরিবারের সদস্যদের একে একে হত্যা করা হচ্ছে। এর আগে সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর পিতা ও ভাইকে একইভাবে হত্যা করা হয়। খুনিরা বরাবরই সরকারি দলের আশ্রয়ে রয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য : খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিত ও আকস্মিকভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। তবে আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান মুন্সী বলেন, দুর্বৃত্তরা ডিবির পোশাক পরিহিত ছিল কি না সেটি নিশ্চিত না হলেও তাদের মাথায় হেলমেট ছিল। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মামলা করেছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর