বুধবার, ৩১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংস্কৃতির শিক্ষাকে ধারণ করতে হবে

--------- সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

সংস্কৃতির শিক্ষাকে ধারণ করতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘সমাজে নৈতিকতার বড় ধস দেখতে পাচ্ছি। মানুষের সুচিন্তা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, কর্তব্যবোধ কমে গেছে। মানুষের পণ্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোভ। পুঁজিবাদী সংস্কৃতি ঢুকে পড়ছে। শিক্ষার ভিতরে যে সংস্কৃতি শিক্ষার বিষয় ছিল, যা মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জ্ঞান দিত তা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। সমাজে শিক্ষকদের সেই সম্মান আর নেই, এখন শুধুই অবহেলা। বিশ্বমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার এই সংকটকে আরও প্রবল করছে।’ বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, শিক্ষার ভিতরে যে সংস্কৃতি শিক্ষার বিষয় ছিল, যা শিক্ষাকে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় করে গড়ে তোলে, সেই শিক্ষার সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। এর ফলে ছেলেমেয়েরা বিপথগামী হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা আর মাঠে খেলতে যায় না। ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের নৈকট্যের জায়গা, সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেছে। খেলাধুলায় জড়িয়ে থাকলে তৈরি হয় দায়িত্ববোধ। কিন্তু সেই জায়গা থেকে সরে গিয়ে ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে আসক্ত হচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে মানসিক দূরত্ব। এই ফাঁকা জায়গায় ঢুকছে মাদকদ্রব্য। যে আকর্ষণ আমরা খেলাধুলায় পেতাম এখন সেই আকর্ষণ তৈরি করছে মাদকদ্রব্য। বড় পরিবার ভেঙে এখন ছোট পরিবার তৈরি হয়েছে। পরিবারে একটি বা দুটি সন্তান থাকে। অভিভাবকরা সন্তানদের সময় দেন না। ফলে সন্তানরা নিঃসঙ্গ বোধ করে, একাকিত্বকে কাটাতে বেছে নেয় মাদক। এই ছেলেমেয়েগুলো মাদকের ফেরিওয়ালাদের খপ্পরে পড়ে যায়। নেশা পারিবারিক বন্ধনকে নষ্ট করে দেয়, মানুষের ভালোমন্দের জ্ঞান থাকে না। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আরও বলেন, এখন মানুষ যা আছে তার থেকে বেশি দেখাতে যায়। পরিবারে বিত্তের মহড়া চলে। সাধ্যের বাইরের জিনিসকে হাতে পেতে চায়। এই লোভের ফলে বাড়ছে ঘুষ-দুর্নীতি। পরিবারগুলো বিত্তের জন্য নেশাগ্রস্ত। মানুষের সুনীতিবোধ আলগা হয়ে যায়। তখন পরিবারের ছেলেমেয়েরা আর বড়দের শ্রদ্ধা করতে পারে না। এই কারণগুলোয় মাদক ও উগ্রপন্থা বাড়ছে। মানুষের সংস্কৃতিবোধের জায়গায় ফাটল বড় হচ্ছে। সম্মিলিত প্রভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কোথায় যেন একটা উদ্দেশ্যহীনতা কাজ করে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পিতা-মাতাকে সন্তানদের সময় দিতে হবে। সন্তানদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সন্তানদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অর্জন করতে সৎ এবং নৈতিক আচরণ করতে হবে বাবা-মাকে। পরিবারে সুনীতি চর্চা বাড়াতে হবে। পণ্যের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঘরে আবদ্ধ না রেখে সন্তানদের খেলার মাঠে পাঠিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে। মানুষ তখনই বদলায় যখন শিক্ষাকে সে জীবনের মধ্যে গ্রহণ করে। সংস্কৃতির শিক্ষাকে ধারণ করতে হবে, যা জীবনকে বড় করে তোলে। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে মনে করি, শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য নয়। শিক্ষাকে সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর