বুধবার, ৩১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

আলম-সোহেলের বস্তির শাসন

মাহবুব মমতাজী

আলম-সোহেলের বস্তির শাসন

আলম - সোহেল

আলম-সোহেলের শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বস্তিবাসীরা। রাজধানীর মিরপুরের বালুমাঠ মোল্লার বস্তি, ভোলা বস্তি, কালশি বস্তি, উত্তর কালশি বস্তি ও বৃন্দাবন বস্তিতে এই দুই ভাইয়ের নিজস্ব আইন। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলতে পারে না। তারা যখন যা ইচ্ছা তাই করেন। এমনকি রাজধানীতে মাদক সরবরাহের একটি বড় সিন্ডিকেটও তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে, তাদের অনুমতি ছাড়া বস্তির কোনো বাসিন্দা কোনো বস্তিতে কিছু করতে পারে না। বস্তির ঘর বিক্রি এবং ঘর ভাড়া করার জন্য তাদের অনুমতি নিতে হয়। আর বস্তির নারী বাসিন্দাদের মধ্যে যখন যাকে তাদের ‘মনে ধরে’ তখন তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে নিজেদের প্রমোদে ব্যবহার করেন। একাধিক নারী তাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বস্তি ছাড়া হয়েছেন। সোহেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে গত ১৫ মে পল্লবী থানায় মামলা করেছেন এক নারী। এ ধরনের একাধিক অভিযোগ থাকার পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ করেছেন বস্তিবাসীরা। তারা আরও জানান, আলম-সোহেলের নিয়ন্ত্রণে মাদকের একটি বড় সিন্ডিকেট আছে। যারা গাঁজা, মদ, ইয়াবা রেলপথে ভৈরব থেকে এনে নিজেদের প্রভাবে থাকা বস্তিগুলোতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকে। এক্ষেত্রে আলম ও সোহেলকে সহায়তা করে রাকিব, শরীফ, জাহাঙ্গীর, লাইলি, শাহিন, মেহেদী, মামুন এবং মাস্টার। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীর স্থানীয়দের কাছে ‘ইয়াবা সম্রাট’ নামে পরিচিত। কিন্তু কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায় না। বস্তিবাসীদের আলম সব সময় পিস্তল আর রামদা দেখিয়ে তটস্থ রাখে। পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাদন ফকির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আলম-সোহেল এ এলাকার খুবই খারাপ লোক। তাদের মধ্যে সোহেলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে। আলমের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। এই দুই ভাইয়ের নির্যাতনে স্থানীয়রা অতিষ্ঠ সেটা আমরা জানি, সোহেলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তারা মাদক ব্যবসায় জড়িত এ তথ্যও আমাদের কাছে রয়েছে। কিন্তু হাতেনাতে মাদকসহ ধরতে না পারলে তো গ্রেফতার করা যায় না। মানিক নামে বস্তির এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, তিনি প্রায় ৬ মাস আগে বস্তিতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ঘর কেনেন। এ খবর পেয়ে আলম আর সোহেল তাকে ডেকে ঘর দুটি তাদের দিয়ে দিতে বলে এবং যে টাকা দিয়ে সে ঘর কিনেছেন সেই টাকা দেওয়ারও আশ্বাস দেন। ঘর দুটি নেওয়ার পর তাকে আর টাকা দেয়নি তারা। টাকা চাইতে গেলে পিস্তলের গুলিতে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় তাকে। কবির নামে আরেকজন জানান, বস্তিতে থাকাবস্থায় আলমের একটি সমিতিতে তারা টাকা জমাত। ৩০ হাজার টাকা জমানোর পর তা চাইতে গেলে আলমের ভাই সোহেল একের পর এক তারিখ দেয়। একদিন তার বোনকে নিয়ে আলমের অফিসে টাকা চাইতে গেলে তাকে বাইরে রেখে দরজা লাগিয়ে দেয় সোহেল। এরপর সোহেল আর মাস্টার নামে এক ব্যক্তি তার বোনকে অফিসের ভিতরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তার বোন চিৎকার শুরু করলে তারা তাকে ছেড়ে দেয়, কিন্তু টাকা আর ফেরত দেয়নি। জানা গেছে, আরেক গার্মেন্টস কর্মী দীর্ঘদিন ধরে সোহেলের কাছে টাকা জমিয়েছিল। সেই টাকা দেওয়ার কথা বলে গত ২৫ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে বালুমাঠের পাশে মোল্লার বস্তিতে তার অফিসে আসতে বলে। ওই নারী তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যায়। সোহেল তার স্বামীকে সিগারেট আনার জন্য দূরে এক দোকানে পাঠায় এবং সেই সুযোগে ওই নারীর শ্লীলতাহানি করে। এ ঘটনা কাউকে না জানাতে শাসিয়ে দেয় সোহেল। পরে বস্তি ছেড়ে অন্যত্র বাসা নিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঘটনাটি সম্পর্কে কথা বলে গত ১৫ মে পল্লবী থানায় মামলা করেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন যৌন নির্যাতনের শিকার এ নারী। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, মিরপুর-১২ এর মাতব্বর মোল্লা রোডের বস্তির সঙ্গে ঘেঁষা ৬/এ নম্বর কাজী ভিলায় থাকেন আলম। আলম ওই বাসার ৪র্থ তলায় ভাড়া থাকেন বলে জানান বাসার কেয়ারটেকার লালমিয়া। সেখান থেকে ৫০ গজ পশ্চিমে বস্তির প্রবেশ পথেই আলমের অফিস। এ অফিস থেকেই বস্তি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে বাসার অন্যান্য বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ বাসাতেই মাঝে মাঝে সোহেল এসে থাকেন। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে লালমিয়ার মোবাইলফোন দিয়ে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। পরে আলমের মোবাইলে (০১৭১৩৩৪৪০০৭) একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর