বুধবার, ৩১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
হৃদরোগ ইনস্টিটিউট

সক্রিয় দালাল সিন্ডিকেট

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সক্রিয় দালাল সিন্ডিকেট

হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে গলার হলুদ কার্ডের দিকে। কার্ডে লেখা ‘দর্শনার্থী’। হাসপাতালের ভিতরে দালালের দৌরাত্ম্য কমাতে রোগীপ্রতি দুটি করে কার্ড ইস্যুর ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভিতরে না ঢুকলেও বাইরে থেকে রোগী ভাগিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে দালাল চক্র। তাই হাসপাতাল গেটের বাইরে কড়া পাহারা এবং তথ্য ডেস্কের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। সমস্যা সমাধানে আধুনিক মানসম্মত সেবা দিতে ১০০ কোটি টাকার মাস্টারপ্ল্যানে আসছে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট। তবুও থেমে নেই তাদের প্ররোচনা। সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগী হাসপাতালে পৌঁছালেই তারা সিন্ডিকেট করে মেশিন নষ্ট বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেক রোগীর স্বজনরাই ওই অ্যাম্বুলেন্সেই রোগীকে নিয়ে যাচ্ছেন প্রাইভেট ক্লিনিকে। আর এতে অন্ধের যুষ্ঠির কাজ করছে দালাল চক্র। তারা রোগীর সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে উঠে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ক্লিনিকগুলোয়। এসব দেখেও অনেক সময় না দেখার ভান করছেন যোগসাজশে থাকা হাসপাতালের কিছু কর্মচারী। হাসপাতালের বারান্দায় আশ্রয় নেওয়া গাজীপুরের আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমি হাসপাতালে এসে বেড না পেয়ে বারান্দায় কয়েক দিন ছিলাম। সুযোগ পেলেই কয়েকজন ঘুরেফিরে আমাকে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলত। কিন্তু আমি বলছি সামর্থ্য নাই। পরে বলে টাকা দিলে এই হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করে দেবে। তাদের হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে দেখি।’ দালাল চক্রের কথা স্বীকার করে নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. আফজালুর রহমান বলেন, ‘দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাই হাসপাতালের ভিতরে দর্শনার্থী কার্ড চালু করেছি যাতে রোগীর স্বজন ছাড়া কেউ ঢুকতে না পারে। এর আগে অনেকবার দালাল থেকে রোগীদের সচেতন করতে পোস্টার লাগানো হয়েছে। কিন্তু কেউ না পড়ায় কাজে আসে না। এজন্য মাইকে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।’ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৪১৪ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী আসে ৯৫০ জন। এর এক তৃতীয়াংশই ভর্তি হয়। তাই স্থানসংকুলানে এই স্পর্শকাতর রোগীদের ঠাঁই হয় হাসপাতালের বারান্দা ও করিডরে। আইসিইউ ও যন্ত্রপাতি-স্বল্পতার কারণে প্রাণ হারায় মানুষ। তাই উন্নত সেবা দিতে মাস্টারপ্ল্যানে আসছে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট। শয্যাসংখ্যা বাড়াতে হাসপাতালের দুই পাশের ভবনের ওপর নতুনভাবে তিনটি ফ্লোর করা হচ্ছে। ওই বর্ধিত অংশের কাজ শেষ হলে ওখানে শয্যা বসানো হবে আরও ৪২০টি। অর্থাৎ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা হবে বর্তমানের দ্বিগুণ। এই হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই দিনে-রাতে মরণাপন্ন অবস্থায় রোগী আসে। এদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন জরুরি বিভাগ। সেই লক্ষ্যে হাসপাতালের অভ্যর্থনা কক্ষের পাশেই বসানো হয়েছে ইকো মেশিন ও প্রাথমিক জরুরি বিভাগ। এর পাশাপাশি রোগীদের সংকটাপন্ন অবস্থায় জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ‘স্টেপটোকাইনেস’ ইনজেকশনটি দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। গত ৭ মে থেকে অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রায় ৫ হাজার টাকা মূল্যের এই ইনজেকশনটি হাসপাতালের বাজেট থেকে রোগীদের ফ্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের পেছনের অংশে ১৪ তলা বিল্ডিংয়ের পরিকল্পনা একনেকে পাস হয়েছে। এই অংশে একাডেমিক শাখার পাশাপাশি একটি সম্পূর্ণ ফ্লোরে থাকবে আইসিইউ, একটিতে থাকবে ক্যাথ ল্যাব। এ ছাড়া প্যাথলজি ও ক্যানটিনের ব্যবস্থাও রয়েছে পরিকল্পনাধীন। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘সেবার মানে আধুনিকায়ন নিয়ে আসতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম থেকে শুরু করে রোগীদের প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো বদলাতে শুরু করেছি। এক দিনে তো সবকিছু সম্ভব নয়, তাই যা আছে সেটুকু দিয়ে সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর