বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

জব্দ বিলাসবহুল ৬৬ গাড়ি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা

মাহবুব মমতাজী

মিথ্যা তথ্য দিয়ে কারনেট এবং প্রিভিলেজ সুবিধার আওতায় আনা জব্দকৃত ৬৬টি বিলাসবহুল গাড়ি দেওয়া হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের। এসব গাড়ি বিভিন্ন সময়ে জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। অবশ্য গাড়িগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় ৪০ শতাংশ ছাড়ে নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার পরও কোনো ক্রেতা না পাওয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়ার একটি প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। উচ্চ পর্যায়ের অনুমতি পেলেই গাড়িগুলো হস্তান্তর করবে সংস্থাটি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিউর রহমান জানান, সরকারি পরিবহন পুলের জন্য বিভিন্ন সময়ে গাড়ি কেনা হয়। বাইরে থেকে না নিয়ে এসব গাড়ি কেনা যায় কিনা তার একটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। উচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন পেলে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য জব্দকৃত এসব গাড়ি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আগে জব্দ হওয়া ৬৬টি গাড়ি বিক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাড়িগুলোর জন্য উপযুক্ত দামের ক্রেতা না পাওয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে বারবার আশস্ত করার পরও অনেকে গাড়িগুলো কেনার সাহস পাননি। সম্প্রতি কোনো কোনো মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সচিব পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তার গাড়ির সংকট রয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষ বিলাসবহুল গাড়িগুলো তাদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮০টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। এর মধ্যে ১৪টি গাড়ি নষ্ট হতে চলেছে। গত পাঁচ বছরে কারনেট সুবিধা নিয়ে ব্র্যান্ড নিউ টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, মিতসুবিসি, জাগুয়ার এস টাইপ, নিশান ৩০০সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রায় ৪০০টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী, কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ। আমদানি করা এসব গাড়ির প্রতিটির দাম ১ থেকে ৫ কোটি টাকা। বেশির ভাগ গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। পরবর্তীতে ৮০ শতাংশ গাড়িই হাতবদল হয়ে যায়। যারা বিক্রি করেছেন তারা কমপক্ষে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা লাভ করেছেন। এতে সরকার কয়েক কোটি টাকার শুল্ক কর থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়ির অপব্যবহারকারীদের বেশির ভাগ বিদেশি নাগরিক। তাদের কেউ কেউ বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি, ব্রিটিশ সাহায্য সংস্থা ডিএফআইডি, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা, ইউনিসেফ ও ইউএনডিপির মতো প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন। এরা বাংলাদেশে অবস্থান শেষে গাড়ি আর ফেরত নিয়ে যাননি এমন গাড়ির সংখ্যা প্রায় ৪০০। পরবর্তীতে তারা এসব দামি গাড়ির বেশির ভাগই স্থানীয় বাংলাদেশিদের কাছে বিক্রি করে চলে গেছেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশে আসেন বিশ্বব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ক্রিস্টিনা কাইমস। মাঝে কিছু দিন বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনেন তিনি। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর তার পাসবইয়ের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু তিনি পাসবই এনবিআরে জমা দেননি। তার গাড়িটিরও খোঁজ পাওয়া যায় না। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ সঞ্চয় কাঠুরিয়াও একই কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে তিনি ফিরে যাওয়ার সময় শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধার বিপরীতে ইস্যু করা পাসবই এনবিআরে জমা দেননি। বর্তমানে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ-বিষয়ক মুখ্য অর্থনীতিবিদ হিসেবে কাজ করছেন। ঢাকা কার্যালয়ের আরেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ সালমান জাইদির বেলায় একই ঘটনা ঘটেছে। তিনি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়ি ব্যবহার করে চলে গেছেন। গাড়িগুলোর কোনো খোঁজ মেলেনি।

সর্বশেষ খবর