শুক্রবার, ২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজনীতিবিদদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনীতিবিদদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বাজেটকে অভিনন্দন জানিয়ে মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের মিছিল

বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজনীতিবিদেরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত বাজেটকে উন্নয়নমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে। সারা দেশে দলটি আনন্দ মিছিলও করেছে। বিএনপি বলেছে, সরকার বাজেটকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। এই বাজেট ঘোষণায় করের বোঝা আরও বাড়ল। নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতনও বেড়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বাম সংগঠনগুলো বলছে, এ বাজেট লুটপাট ও দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে।  যুগোপযুগী উন্নয়নমূলক বাজেট— আওয়ামী লীগ : নতুন বছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে যুগোপযুগী উন্নয়নমূলক বাজেট বলে অভিহত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে একটি উন্নয়নমূলক বাজেট দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এই বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে সারা দেশে আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন।

এটা নির্বাচনমুখী বাজেট নয় : কক্সবাজারে ওবায়দুল কাদের : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এবারের বাজেট সুদূরপ্রসারী বাজেট। ভিশন-২০২১ লক্ষ্য রেখে এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এবারের বাজেট সুফল এবার যেমন পাওয়া যাবে তেমনি ভবিষ্যতেও এ বাজেটের সুবিধা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এবারের বাজেট দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়নের অংশ।’

গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বাজেট নির্বাচনমুখী বাজেট নয়। কারণ সামনে আরও একটি বাজেটের পর নির্বাচন। এবারের বাজেট হচ্ছে ব্যবসাবান্ধব, কৃষিবান্ধব, গরিববান্ধব ও উন্নয়নবান্ধব বাজেট।’ কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র তাণ্ডবে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের জন্য তিনি গতকাল বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে বোয়িং বিমান অবতরণ করার পরপর রানওয়েতে সাংবাদিকদের কাছে বাজেট নিয়ে এসব কথা বলেন।

গতকাল বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ‘গণমুখী’ ও ‘উন্নয়নমূলক’ বাজেট। এর মাধ্যমে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ গঠন আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের টানা আট বছরের ক্ষমতায় দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে দেশের অগ্রগতি হয়েছে। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সারা দেশে আনন্দ মিছিল : বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল করে দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা। এরপর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল করে দক্ষিণ যুবলীগ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে সাফিয়া খাতুন ও মাহমুদা বেগমের নেতৃত্বে মিছিল করে মহিলা আওয়ামী লীগ। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনও বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে পৃথক পৃথক আনন্দ মিছিল বের করে। বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় আনন্দ মিছিল করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন মিছিলের নেতৃত্ব দেন। বিকালে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়।

বাজেটকে সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে —ফখরুল : সরকার বাজেটকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আগমগীর। তিনি বলেন, এ বাজেটটি জনগণের কল্যাণে খুব একটা কিছু করতে পারবে না। গতকাল দুপুরে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৬তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দুস্থ মহিলাদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচের তলায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে দুস্থ মহিলাদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল। এ সময়ে বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূরী আরা সাফা, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার সামনে নির্বাচনকে রেখে রাজনৈতিকভাবে বাজেটকে ব্যবহার করছে। কোন কোন খাতে এই ব্যবহার হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের অবস্থা ভালো না। ওইসব খাতে কীরকম বরাদ্দ হচ্ছে তা দেখতে চাই। সেই কারণে আমরা মনে করি এই বাজেটটি জনগণের কল্যাণে খুব একটা কিছু করতে পারবে না।

বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি উল্লেখ করে তাদের বাজেট উপস্থাপনার বৈধ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপি মহাসচিব।

বি চৌধুরীর প্রশ্ন : বাজেটে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে কত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা জানতে চান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা ও গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘উগ্র-সন্ত্রাসবাদ বা রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদ এগুলোর বিরুদ্ধে কত টাকা কীভাবে খরচ করা হবে ওগুলো পুলিশ জানে, র?্যাব জানে, আমি বলতে পারব না। কিন্তু মানুষের মধ্যে চেতনার সৃষ্টি করা দরকার। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। সেজন্য কত টাকা খরচ করা হবে তা জানা দরকার।’

অগণতান্ত্রিক বাজেট —বাসদ : বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, আমলা দ্বারা অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরি বিশাল বাজেটে বিপুল করের বোঝা জনগণের কাঁধে চাপানো হয়েছে। আমলাদের দ্বারা অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রণিত হয়েছে এ বিশাল বাজেট। সরকার এবারের বাজেট আয়তনে বড় বলে আত্মতুষ্টি প্রকাশ করছে অথচ এর দায় যে সাধারণ শ্রমজীবী মধ্যবিত্ত জনগণকেই বহন করতে হবে সে বিষয়ে নিশ্চুপ।

বাস্তবায়নে ঝুঁকি আছে —গণতন্ত্রী পার্টি : দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার বলেন, বৃহৎ বাজেট সব সময়ই বাস্তবায়নে ঝুঁকি থেকে যায়। তারপরও বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যে উন্নয়নের ধারা সূচনা করেছে এই সবচেয়ে বড় বাজেট তার প্রমাণ। এই বাজেটে আনুপাতিক হারে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি বরাদ্দ করা হলে ভালো হতো।

বাজেট কর্মসংস্থানমুখী নয় —জেএসডি : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেছেন, দেশ পরিচালনায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সরকারের বাজেটে উন্নয়ন পরিকল্পনা খাতে বিরাট বরাদ্দ রয়েছে। দেশরক্ষায় আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসন চালানোর জন্য বিশাল রাজস্ব ব্যয়। কিন্তু বাংলাদেশে বেকারত্ব এখন বড় সমস্যা। কর্মসংস্থানমুখী বাজেট তৈরি ও এর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা ও বরাদ্দ প্রয়োজন, যা এ বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি।

সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে উদ্যোগ নেই—ন্যাপ : বাজেটকে ধনিক ও লুটেরা শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার বাজেট হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।

লুটপাট ও দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে—জোনায়েদ সাকি : গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশাল বাজেট বহন করার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এই সরকারের নেই। এই বাজেট লুটপাট ও দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে। এটা গত কয়েক বছরেও দেখা গেছে যে, বাজেটে আয়-ব্যয় কোনোটিরই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। এ বছর তার চাইতেও বড় আকারের বাজেট ঘোষণার তাহলে অর্থ কী?

এমপি-মন্ত্রীদের লুটপাটের বাজেট—এনডিপি : ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি—এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ভোটারবিহীন সরকার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এমপি-মন্ত্রীদের লুটপাটের বাজেট ঘোষণা করেছে। এই বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচনের কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

সর্বশেষ খবর