শুক্রবার, ২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
অপহরণ থেকে ফিরে ডা. ইকবাল

নির্যাতন-জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, শুধু চুপ থাকতে বলেছে

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

‘সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছি, ওরা আমাকে চোখ বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল, আবার চোখ বেঁধেই বাসার পাশে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। ওরা যা-ই খেতে দিয়েছে তা খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে ছিলাম। এমনিতে নির্যাতন করেনি, কোনো কিছু জিজ্ঞাসাও করেনি।’ গতকাল সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন ‘অপহরণ’-এর সাড়ে সাত মাস পর ফিরে আসা লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. ইকবাল মাহমুদ। তবে কেন বা কারা ধরে নিয়ে গেছে— জানতে চাইলে শুধু চুপ থাকতে বলছিলেন। এর আগে তিনি বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুরের নিজ বাসায় পৌঁছান বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। চোখ বাঁধা অবস্থায় লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কে দুর্বৃত্তরা তাকে ফেলে রেখে যায়। তবে পুলিশ বলছে, পৌর শহরের গরুবাজার এলাকায় চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে পাওয়া গেছে। এদিকে এত দিন পর বাড়ি ফিরে আসায় আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীরা তাকে একনজর দেখতে বাড়িতে ভিড় জমান। ডা. ইকবাল মাহমুদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নুরুল আলম বলেন, ‘গত ১৪ অক্টোবর শুক্রবার রাতে আমার ছেলেকে একটি মাইক্রোবাসযোগে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে অপহরণ করা হয়। বহু খোঁজাখুঁজি করে আমরা তার সন্ধান পাইনি। হঠাৎ বুধবার রাতে আমাদের লক্ষ্মীপুরের “বকুল কটেজ”-এর বাসায় ফিরে আসে সে। পরে জানতে পারলাম চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা।’ সন্তানকে জীবিত ফিরে পেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান তার পিতা। লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন জানান, ‘লক্ষ্মীপুরের ডা. ইকবাল মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন, বুধবার রাতে পৌর শহরের গরুবাজার এলাকায় চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে পাওয়া গেছে। তিনি বর্তমানে সুস্থ ও পরিবার-পরিজনের কাছে রয়েছেন।’ তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে ডা. ইকবাল মাহমুদ লক্ষ্মীপুরের বাসা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে ভোররাত ৩টা ১০ মিনিটে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে আড়ংয়ের সামনে বাস থেকে নামেন। এ সময় সাদা পোশাক পরা কয়েকজন তাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। ডা. ইকবাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। খবর পেয়ে তার পরিবার লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকায় এসে ১৬ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করে। পরে পুলিশের মাধ্যমে আড়ংয়ের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে তাকে অপহরণ করা মাইক্রোবাসের পেছনে একটি মোটরসাইকেলে দুজন আরোহী এবং একটি পুলিশের গাড়ি ছিল। অপহরণকৃতদের কোনো মুখোশ ছিল না, তাদের চেহারাও স্পষ্ট দেখা গেছে ওই ফুটেজটিতে।

সর্বশেষ খবর