বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিপজ্জনক নকল প্রসাধনীতে বাজার সয়লাব, ঝুঁকি ক্যান্সারের

ফুটপাথ, শপিং মল অনলাইন বাজার সর্বত্রই ছড়াছড়ি

জিন্নাতুন নূর

বিপজ্জনক নকল প্রসাধনীতে বাজার সয়লাব, ঝুঁকি ক্যান্সারের

বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের কথা বলে ক্রেতাকে গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে নকল, মানহীন প্রসাধনী পণ্য। লাভের জন্য প্রস্তুতকারকরা মানবদেহের ক্ষতির বিষয়টি একেবারেই বিবেচনায় নিচ্ছেন না। দেশেই তৈরি এসব পণ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। অত্যন্ত বিপজ্জনক এই নকল প্রসাধনী ব্যবহারে ক্যান্সার, চর্মরোগসহ শরীরে বড় ধরনের ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু ফুটপাথ থেকে নগরীর অভিজাত শপিং মল, এমনকি আজকাল ফেসবুকসহ অনলাইনমাধ্যমেও বিক্রি হচ্ছে দেদার। ঈদ সামনে রেখে রাজধানী ছাড়াও বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় এখন রমরমা ব্যবসা। শুধু মেয়েরা নয়, ছেলেরাও ব্যবহার করছে নকল প্রসাধনী। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আজিজুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের সাধারণ লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ব্যবহারকারীর কন্ট্রাক ডারমাটাইসিস হয়, চামড়া লাল হয়ে যায়। পরে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন তৈরি করে।’ তিনি বলেন, ‘ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারে স্কিন ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি ত্বকে দানা, হাঁপানি, মাথাব্যথা ও চোখ জ্বালাপোড়াসহ অন্যান্য রোগেরও উপদ্রব হয়।’ বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রসাধনী পণ্যে উচ্চমাত্রার রাসায়নিক মিশ্রিত, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গবেষণার জন্য ঢাকার নিউমার্কেট, চকবাজার ও ধানমন্ডির একটি অভিজাত শপিং মল থেকে ফেসওয়াশ, বডি লোশন, ফেয়ারনেস ক্রিম, হারবাল ফেসপ্যাক ও হেয়ার জেলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রং ফরসাকারী ও ব্লিচিং ক্রিমের ৭৮ শতাংশেই পাওয়া যায় টাইটেনিয়াম, যা থেকে ক্যান্সার হতে পারে। ‘টক্সিক কেমিক্যাল ইন বিউটি প্রোডাক্ট—এ পটেনশিয়াল থ্রেট টু হিউম্যান হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ শীর্ষক এই গবেষণায় আরও দেখা যায়, প্রতিটি পণ্যে কমপক্ষে তিনটি ভারী লোহাজাতীয় পদার্থ রয়েছে। এই পণ্য দীর্ঘদিন ব্যবহারে রয়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। বডি লোশনে গড়ে ২৪১ পিপিএম টাইটেনিয়াম এবং ১৬৩০.০৬ পিপিএম আর্সেনিক পাওয়া গেছে। মিলেছে জিঙ্কের মতো পদার্থও। টাইটেনিয়ামের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি ছিল কথিত হারবাল পণ্যে। সরেজমিনে, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্করে ভেজাল প্রসাধনীর হকারদের লাইন ধরে বিক্রি করতে দেখা যায়। রয়েছে লরিয়েল, ল্যাকমে, মেবেলিন ও গার্নিয়ারের মতো ব্র্যান্ডের নকল পণ্য। সেখানেই এক তরুণীকে লরিয়েল ব্র্যান্ডের ফেস পাউডার কিনতে দেখা যায়। দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা বললেন, ‘একদাম ২০০ টাকা।’ অথচ আসল পণ্যটির দাম ৪৫০ টাকা। কম দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা উত্তর দেন, ‘এর থেকেও কমে দিতে পারমু। লোক দেইখ্যা জিনিস বেচি আমরা।’ বলেই মুচকি হাসেন। চাহিদা থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও অনলাইন দোকানগুলোয় কসমেটিকসের আসল ছবি দিয়ে নকল পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারণত এসব বিক্রেতার অধিকাংশেরই কোনো স্থায়ী দোকান থাকে না। ফলে ক্রেতাদের পণ্য বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ নেই। সম্প্রতি একটি পেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আই শ্যাডো বক্সের অর্ডার দেন। তিনি পণ্যটি দেখতে চাইলে জানানো হয়, সেই সুযোগ নেই। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি ছেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পণ্যটি পৌঁছে দেয়। কিন্তু ছাত্রীটি পরীক্ষা করে দেখেন, সেটি খুবই নিম্নমানের। একবার ব্যবহারের পরই ভেঙে যায়। নকল পণ্য বিক্রির এ রকম অনলাইন দোকান এখন অসংখ্য।

সর্বশেষ খবর