বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

নরসিংদীতে জমজমাট ঈদের বেচাকেনা

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

নরসিংদীতে জমজমাট ঈদের বেচাকেনা

দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের হাট নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাটে এখন পুরোদমে চলছে ঈদের বেচাকেনা। ঈদের আমেজে বেচাকেনার ব্যস্ততা আর ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনায় বাবুরহাটের পরিবেশ বেশ সরগরম। ঈদ উপলক্ষে দোকানে দোকানে দেশীয় তৈরি নতুন নতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের শুরু থেকেই সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত দেশীয় কাপড়ের এই বৃহত্তর বাজারটি। সপ্তাহে তিন দিন এখান থেকে পাঁচ শতাধিক ট্রাক বোঝাই কাপড় যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে। বাবুরহাটে প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক ছোট-বড় পাইকারি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে শাড়ি-লুঙ্গি থেকে শুরু করে থ্রি-পিস, থান কাপড়, পর্দা, সোফার কভার ও গামছাসহ এমন কোনো কাপড় নেই, যা বাবুরহাটে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া আমদানি করা বিদেশি কাপড়ও পাইকারি বিক্রি হয়। সাধারণত প্রতি হাটে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার কেনা বেচা হয়। আর ঈদের মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকায়। ঢাকা থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর দিকে এবং নরসিংদী শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাশ ঘেঁষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় ১৯৩৪ সালে জমিদার হলধর সাহা প্রায় ১১ একর জমির ওপর হাটটি গড়ে তোলেন। সরেজমিনে বাবুরহাটে গিয়ে দেখা যায়, আসন্ন ঈদকে ঘিরে বাজারটিতে বেড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা। ব্যবসায়ী ছাড়াও পাইকারি দরে জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি কেনার জন্য আসছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা। দেশের বেশির ভাগ শাড়ি, লুঙ্গি ও অন্যান্য বস্ত্র কারখানাগুলো নরসিংদী কেন্দ্রিক। এসব বস্ত্র কোম্পানির প্রধান শো-রুম রয়েছে বাবুরহাটে। এ ছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ও চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের কাপড় পাওয়ায় পাইকারি ক্রেতাদের আগ্রহের কমতি নেই। সপ্তাহের শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, ফেনী, বরিশাল, পিরোজপুর, জামালপুর, ভোলা, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত থাকছে বাবুরহাট।

বাবুরহাটে লুঙ্গি ও শাড়ির পাইকারি বিক্রেতা আমানত শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদ উপলক্ষে শাড়ি-থ্রি পিসসহ নতুন নতুন ডিজাইনের যাবতীয় কাপড় তোলা হয়েছে দোকানগুলোতে। খুচরা দোকানগুলোতে বেচাকেনা বাড়ায় পাইকারি বাজারে বেচাকেনা বেড়েছে। ডি আর পি টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী সুশীল চন্দ্র সাহা বলেন, ক্রেতাদের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডি আর পির থ্রি-পিসগুলোতে আনা হয়েছে নতুনত্ব। বাজারের বোখারি লুঙ্গির স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কয়েক বছর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এবার বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। নিউ মডেল লুঙ্গির স্বত্বাধিকারী আলহাজ আবদুল বাতেন মিয়া বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে নতুন নতুন ডিজাইনের লুঙ্গি বাজারে এনেছি। বাবুরহাটের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের বাজারে নরসিংদীর টেক্সটাইলে উৎপাদিত প্রিন্টের কাপড়ের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি টাঙ্গাইল, পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানের কাপড়ও ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার লাভ কিছুটা কমে গেছে। ডাইংয়ের কেমিক্যালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করেছেন তারা। সেকেরচর বাবুরহাট বাজার বণিক সমিতির সহ-সভাপতি আবদুল বাকির বলেন, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় আশানুরূপ কাপড় বেচাকেনা হচ্ছে। নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুরো জেলার ব্যবসায়ীরাই তাকিয়ে রয়েছে বাবুহাটের ঈদ বেচাকেনার দিকে। কারণ বেচাকেনা ভালো হলেই ভালো থাকবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।

 

সর্বশেষ খবর