বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

রহস্যময় ময়নাতদন্ত রিপোর্টে পার পেয়ে যাচ্ছে আসামি

হতাশ হয়ে পড়ছেন পরিবার-পরিজন

মাহবুব মমতাজী

সাহিদা আত্মহত্যা করেছে, না তাকে হত্যা করা হয়েছে, সে রহস্য ময়নাতদন্তেও বের হয়নি। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ না থাকায় পার পেয়ে যাচ্ছে আসামি। সম্প্রতি দেওয়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সাহিদার মৃত্যুর কারণ জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। তবে পুলিশ বলছে, হত্যার বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো মতামত জানাতে পারেননি। তাহলে কীভাবে মৃত্যু হলো সাহিদা আক্তারের (২১)—এ প্রশ্ন এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে স্বজনদের মধ্যে।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকের ২৫ নম্বর লেনের ২৫ নম্বর বাসা থেকে সাহিদা আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। তবে জসিম নামে একজন সাহিদাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন তার মা মিনারা বেগম। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়। তবে ময়নাতদন্তে কোনো কিছু জানা যায়নি। যে বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয় সেখানে সাবলেটে সাহিদার সঙ্গে মরিয়ম ও কেয়া নামে আরও দুজন থাকতেন। তারা স্থানীয় একটি গার্মেন্টসের শ্রমিক ছিলেন। ঘটনার দিন ওই বাসায় জসিম নামে একজন সাহিদার সঙ্গে দেখা করতে আসে। পরে সে চলে যায়। দুপুরে খাবার খেতে মরিয়ম ও কেয়া বাসায় এলে বিছানার ওপর সাহিদার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। বিয়ের আগে সাহিদার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল জসিম মিয়ার। এ অবস্থায় সাহিদাকে আবুল কালাম নামে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেন তার বাবা-মা। এ সংসারে অনিক মিয়া নামে ছয় বছরের এক সন্তান আছে। দুই বছর আগে সাহিদার স্বামী আবুল কালাম শ্রমিক ভিসায় দুবাই চলে যান। কিছুদিন পর সাহিদা চলে আসেন রাজধানীর পল্লবীতে। এখানে কেয়ার ফ্যামিলি নামে একটি সুপার শপে চেকারের কাজ নেন তিনি। পল্লবীতে থাকাকালে জসিমের সঙ্গে সাহিদার যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। আরও জানা যায়, সাহিদার মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পান পল্লবী থানার এসআই মো. সেলিম রেজা। তিনি ২৮ মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টে সাহিদার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মতামত প্রদান করেননি। মোবাইল ফোনে ডা. প্রদীপ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বিষয়ে আমি এ মুহূর্তে কিছু বলব না। ঘটনার বিস্তারিত সরাসরি ছাড়া ফোনে বলা সম্ভব নয়।’ সাহিদার মামাতো ভাই সানাউল্লাহ নূরী জানান, মৃত্যুর আগে জসিমের কাছে সাহিদা ৫০ হাজার টাকা পেতেন। টাকার জন্য কয়েকবার চাপ দিলে সাহিদাকে মারধর করে জসিম। যেদিন সাহিদার লাশ পাওয়া যায় ওই দিন সকালে তার রুমমেটদের সঙ্গে সুস্থ শরীরে তার কথা হয়েছিল। রুমমেটরা বের হয়ে যাওয়ার পর ওই বাসায় জসিম আসে এবং বেলা ১১টার দিকে বের হয়ে যায়। পরে দুপুরে এসে ঘরে সাহিদার লাশ দেখতে পান মরিয়ম ও কেয়া। আর এটি দেখতে পান ওই বাসার সামনের আরেক ভাড়াটিয়া। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তদন্তে হত্যা-সংক্রান্ত কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ময়নাতদন্তে কীভাবে সাহিদার মৃত্যু হলো সে সম্পর্কে চিকিৎসক কিছু জানাতে পারেননি।

 

সর্বশেষ খবর