শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

ঢাকায় বেহাল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন

নগরে দুই সংকট দুই দলে

রফিকুল ইসলাম রনি

ঢাকায় বেহাল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও খোদ রাজধানীতেই বেহাল অবস্থা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। সম্মেলনের চার বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের থানা এবং ওয়ার্ড কমিটি। একই অবস্থা সহযোগী সংগঠনেও। সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগের। ১১ বছর আগে হয়েছিল ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। এরপর আর হয়নি । মহানগর কৃষক লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন সম্মেলনের উদ্যোগ নেই। এক সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও বর্তমানে সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে ভাব। 

জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর এপ্রিলে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিনে নগরের মূল কমিটির পাশাপাশি ৫০টি থানা ও ১০৩টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি দেওয়ার পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে থানা ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। গত ৩১ মে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু সে নিদের্শনা কেউ মানেননি। মহানগরের নেতারা জানিয়েছেন, থানা-ওয়ার্ড সভাপতি-সম্পাদকদের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছেন। এখন চলছে যাচাই-বাছাই। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ওয়ার্ড থানা কমিটি না হওয়ায় নেতা-কর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে।

মহানগরের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় সরকার পতনের আন্দোলনের সূত্রপাত রাজধানীতে। এতে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরাই রাজপথে থেকেছে। সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রেও তাই। বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন, মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওসহ নানা অপরাজনীতির জবাব ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ড নেতারাই দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি না হওয়ায় নেতারা ঝিমিয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগ। তবে খুব শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হবে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, থানা-ওয়ার্ড গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। যারা ওয়ার্ডে দলে বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন, যুবলীগ-ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারাই থানা কমিটিতে স্থান পাবে। জামায়াত-বিএনপি বা অনুপ্রবেশকারীদের স্থান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগে হবে না।

উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশের পর আমরা কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এখন জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই করতে একটু সময় লাগছে। তিনি বলেন, থানায় ৭১টি পদ থাকলেও সেখানে কমপক্ষে ৫০০ ও ওয়ার্ডে ৬৯টি পদের বিপরীতে দুই থেকে তিনশ জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে। যে কারণে যাচাই-বাছাই করতে একটু সময় লাগছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদের পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় দল ঝিমিয়ে পড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল ঝিমিয়ে পড়েনি। রাজপথে বিরোধী দলের আন্দোলন নেই। সরকারি দলে থাকলে আন্দোলনও করতে হয় না। এ ছাড়াও রমজানের মাস সে কারণে এমন মনে হচ্ছে।

কবে হবে সম্মেলন? : ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হচ্ছে না ১১ বছর ধরে। এই দীর্ঘ সময়ে মহানগরের দুই অংশ কোনো থানা কমিটিও দিতে পারেনি। এ কারণে সংগঠনটির উত্তর ও দক্ষিণে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩১ মে। এরপর পেরিয়ে গেছে ১১ বছর। ২০০৯ সালের পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি উঠলেও অজ্ঞাত কারণে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মহানগরের নেতারা বলছেন, বার বার কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেও তারা ফল পাচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, দ্রুতই আমরা ঢাকা মহানগরের দুই অংশের সম্মেলনের তারিখ দিয়ে দেব। আমরা সার্বিক চেষ্টা করছি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর কমিটিতে পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন সংগঠনের সম্মেলন না হওয়ায় এখন তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের মহানগরের সম্মেলন হওয়ার পর বাদ পড়া নেতারা এখন কোথাও জায়গা পাচ্ছেন না। স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান নেতারা ছাত্রলীগ থেকেই এসেছেন।

১১ বছর আগে সম্মেলনে উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মোবাশ্বের চৌধুরী আর সম্পাদক হয়েছিলেন ফরিদুর রহমান খান। দুজনই এখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হিসেবে নিজ নিজ কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত। আর স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন আরিফুর রহমান। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কিছু থানা কমিটি এখনো চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। আবার অনেক থানা কমিটির মেয়াদ ১০ বছরের বেশি। এমনকি মহানগরের দুই শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন বর্তমান নেতৃত্ব।

এদিকে গত ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগ, ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগ ও ১৯ মার্চ তাঁতী লীগের সম্মেলন হয়েছে। মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের উত্তর-দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো ঘোষণা করা হয়নি। গত মঙ্গলবার তাঁতী লীগের মহানগরের সম্মেলন হলে সেখানেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর