শিরোনাম
শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ বনাম ছাত্রলীগ

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

আওয়ামী লীগ বনাম ছাত্রলীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গাইবান্ধার ৫টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে। গাইবান্ধা ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ (সংসদীয় আসন ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩) এ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদেরই বেশি তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে বসে নেই জামায়াত ও জাসদও। জেপিসহ ছোট ছোট দলগুলোও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। অনেক প্রার্থীই এখন কেন্দ্রের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায়। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর পাশাপাশি অলিগলিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের শুভেচ্ছা ব্যানার শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতেও কোনো কোনো আসনে একাধিক প্রার্থী। কার্যত লড়াই হবে গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি  মাহমুদ হাসান রিপনের। গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের পর এখানে উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চান। নিহত এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি এবং লিটনের বড় বোন আফরোজা বারীও প্রার্থী হতে পারেন, নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে তাদের নাম। এ ছাড়া বর্তমান সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুনও মনোনয়ন প্রত্যাশী।

জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত এ আসনে বরাবরই বিএনপির ভোট কম থাকায় তাদের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও কম। সাবেক পিপি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ ও উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে গত উপনির্বাচনে লড়াই করা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী একমাত্র প্রার্থী। জামায়াতের সাবেক এমপি মাওলানা আবদুল আজিজ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় পলাতক আসামি। জামায়াতের আর কারও নাম নির্বাচনের জন্য শোনা যায়নি। গাইবান্ধা-২ (সদর) জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি পর পর দুবার এই আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য। তার পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামস উল আলম হিরু, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ফরহাদ আবদুলল্লাহ হারুন বাবলু দলের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনিসুজ্জামান খান বাবু, জেলা জিয়া পরিষদের সদস্য সচিব খন্দকার আহাদ আহমেদ, গাইবান্ধা জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টির একমাত্র প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক এমপি আবদুর রশীদ সরকার। গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর) আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের ডা. ইউনুস আলী সরকার। তিনি এবারও প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সাবেক পলাশবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মো. মাহমুদুল হক, সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাহারিয়া খান বিপ্লব, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নুরুজ্জামান মণ্ডলের তৎপরতা রয়েছে। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপি সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বছর কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে দলের জেলা সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় তার গুরুত্ব বেড়েছে দলে। জাতীয় পার্টির একমাত্র প্রার্থী হিসেবে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পীর নাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা দিয়েছেন পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তাই তিনি জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানান শিল্পী। এই আসনে এরশাদের জাতীয় পার্টির এমপি হিসেবে ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী বার বার নির্বাচিত হলেও তিনি আর দলে নেই। এখন জাতীয় পার্টির (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী। তিনিও নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে। এ ছাড়া জাসদের প্রার্থী হিসেবে সাবেক সাদুল্যাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম খুদি, জাতীয় পার্টি (জেপি) গাইবান্ধা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. ফজলে করীম আহম্মদ পল্লব নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবুর নামও আলোচনায় আছে।

গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, গোবিন্দগঞ্জ পৌর মেয়র আতাউর রহমান সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক আবদুল লতিফ প্রধান নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সাংবাদিক গাওছুল আজম বিপু, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল মান্নান মণ্ডল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক কবীর আহমেদ, সাবেক এমপি শামীম কাওছার লিংকন, মেসবাহ মণ্ডলের নাম আলোচনায় রয়েছে। জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলে জামায়াতের জেলা আমির ডা. আবদুর রহিম ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হতে পারেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নাম আলোচনায় রয়েছে। কোনো কারণে তিনি এ আসনে নির্বাচন না করলে জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক রাগীব হাসান চৌধুরী, জেলা জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল গনি সরকার, উপজেলা জাপা আহ্বায়ক মশিউর রহমান, সদস্য সচিব ছাদেকুল ইসলাম প্রধান, লুত্ফর রহমান চৌধুরী এবং আলী মাহবুব তালুকদার নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এই আসনের সংসদ সদস্য। তার পাশাপাশি এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনেরও তৎপরতা রয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এখানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাঘাটা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী, ইতিপূর্বের প্রার্থী মোহাম্মদ হাসান আলী, শিল্পপতি নাজমুল হাসান নয়ন ও হাজী রাহীর নাম শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম শহীদ রঞ্জুর তৎপরতা রয়েছে এবং দলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তার নাম জেলা থেকে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বেগম রওশন এরশাদও প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় নেতা-কর্মীরা মনে করছেন।

 

♦ আগামীকাল : জয়পুরহাটে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা

সর্বশেষ খবর