শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেষ দিনে হাত বাড়ালেই টিকিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৮টা। ছুটির দিন বলে জনজীবনে ব্যস্ততা কম। এর পরও দিগ্বিদিক ব্যস্ততায় ভরপুর কমলাপুর রেলস্টেশন। কাউন্টার খুলতেই হই হই শব্দে উচ্চকিত স্টেশন। অপেক্ষমাণ টিকিটপ্রত্যাশীরা যেন ঈদের চাঁদ পেল হাতে! কারণ আর কিছু নয়, প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ করতে বহু কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেতে অন্যান্য দিনের মতোই উল্লাস করে ওঠেন তারা। প্রত্যাশিত টিকিট হাতে পাওয়ায় অধিকাংশের চোখে-মুখে ছিল হাসি। তবে টিকিট বিক্রির পঞ্চম দিন গতকাল ভিড় ছিল কিছুটা কম। একই চিত্র দেখা গেছে আসাদ গেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী ও বালুর মাঠের বাস কাউন্টারগুলোতে। গতকাল ২৫ জুনের রেলের টিকিট নিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে সাহরির পর থেকেই আসা শুরু করেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। টিকিট বিক্রির পরের চিত্র ছিল ছিমছাম ও নীরবতা। বেলা বাড়তেই ভিড় আস্তে আস্তে কমতে থাকে। সেখানে সাধারণের মধ্যে ছিল অন্য রকম এক শৃঙ্খলা। কেউ টিকিট পাননি এমন অভিযোগ মেলেনি। তবে ঠিক সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারবেন কি না এ শঙ্কা ছিল সবার মধ্যেই। ঈদে যাত্রীর চাপে নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে ট্রেন না আসার বিগত ঘটনাগুলোই ভয় বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের মনে। এদের একজন রফিক বলেন, ‘আমরা ২৪ জুনের টিকিট কাটতে এসেছিলাম। তখন তা না পেয়েই বাসায় ফিরে যাই। আজ (শুক্রবার) সাহরির পরই এসে টিকিটের জন্য এখানকার লাইনে দাঁড়াই। তবে গত দিনের চেয়ে ভিড় তুলনামূলক কম ছিল। একদিন আগের টিকিটে ঠিক সময়ে বাড়ি যেতে পারলেই স্বস্তি পাব।’ দিনাজপুরের একতা, দ্রুতযান, নীলফামারীর নীলসাগর এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের তূর্ণা, মহানগর, চট্টলা এক্সপ্রেস, রংপুরের রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনিরহাটের লালমনি এক্সপ্রেস, রাজশাহীর সিল্ক সিটি, পদ্মা, ধূমকেতু এক্সপ্রেস কাউন্টারের সামনে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় কমে যায়। বেলা ১২টা পর্যন্ত দেওয়ানগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ভিড় ছিল। সান্তাহারের জন্য দ্রুতযান এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সামিউল। তিনি বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকিট নিতে পেরেছি। কিন্তু এবারের ঈদযাত্রা একদিন আগে হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না পেলে রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়তে হবে। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন ২৪ হাজার ৬০৮টি টিকিট বরাদ্দ আছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে, ২৫ শতাংশ মোবাইল ফোন কিংবা অনলাইনে আর ৫ শতাংশ ভিআইপিদের জন্য এবং ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্তাদের জন্য। তিনি বলেন, শেষ দিনেও সকাল থেকে সবাই টিকিট পাচ্ছেন। কারও কোনো ঝামেলা হয়নি। সড়কে খানাখন্দের ভয়ে ট্রেনে যাত্রীর চাপ থাকলেও বাসের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহে বেগ পেতে হয়েছে অনেককে। তবে গতকালের চিত্র ছিল একটু ভিন্ন। বাস কাউন্টারগুলোতে যাওয়া মাত্রই ২৫ জুনের টিকিট পাওয়া গেছে। শফিক নামে একজন জানান, বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করেও ২৩ ও ২৪ জুনের টিকিট পাননি তিনি। ২৫ জুনের জন্য কাউন্টারে এসেই পছন্দমতো টিকিট কাটতে পারেন। প্রত্যাশিত টিকিট হাতে পাওয়ার পর সন্তুষ্টির চেয়ে তার মনে আশঙ্কাই ছিল বেশি। জানতে চাইলে বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সাধারণ দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা বেশি লাগে। কিন্তু ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপে যানজট আরও বেশি থাকবে। ফলে ঈদের আগে ঠিকমতো না পৌঁছানোর এক ধরনের দুশ্চিন্তা কাজ করছে। এ বছর ২৬ জুন ঈদুল ফিতর ধরে সোমবার থেকে রেল ও বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়।

রংপুরে বাসের টিকিট নিয়ে নৈরাজ্য : রংপুর প্রতিনিধি জানান, ঈদের অগ্রিম বাসের টিকিট নিয়ে নৈরাজ্য চলছে রংপুরের দূরপাল্লার বাসের টিকিট কাউন্টারগুলোতে। সেখানকার কোনো কাউন্টারেই নির্ধারিত দামে টিকিট মিলছে না। তবে বাড়তি দামে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে টিকিট। এসি বাসের প্রতিটি টিকিটে ৭০০-৮০০ এবং ননএসি প্রতি টিকিটে ২০০-৩০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, ঢাকা কোচস্ট্যান্ড এবং জাহাজ কোম্পানির মোড়ে দূরপাল্লার বাসের টিকিট কাউন্টারে সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ে আগমনী এক্সপ্রেসের টিকিট কিনতে আসা আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ৩ জুলাই ঢাকা যাওয়ার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (স্ক্যানিয়া) বাসের চারটি টিকিট চাইতেই কাউন্টার কর্মচারীরা ‘নেই’ বলে ফিরিয়ে দেন। পরে ১২০০ টাকা দামের প্রতি টিকিটে ৮০০ টাকা করে বেশি দিয়ে চারটি টিকিট কিনতে হয়েছে। এ বিষয়ে কাউন্টার ব্যবস্থাপক নরেশ চন্দ্র বলেন, তাদের কেবল এসি বাস চলাচল করে। ঈদে রংপুর থেকে খালি গাড়ি নিয়ে ঢাকায় যেতে হয়। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মালিকের সিদ্ধান্তেই এসি (স্ক্যানিয়া) এক হাজার ২০০ টাকার টিকিট নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা।

সর্বশেষ খবর