শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফের ডুবল চট্টগ্রাম ঢাকাতেও ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

ফের ডুবল চট্টগ্রাম ঢাকাতেও ভোগান্তি

টানা বর্ষণে আবার ডুবে গেছে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ এলাকা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীর বাসিন্দারা। অনেক রাস্তায় পানি জমে সৃষ্টি হয় যানজটের। কোথাও ছিল হাঁটু পানিও। এ ছাড়া বৃষ্টিতে সকালে দুর্ভোগে পড়েছিল অফিসগামীরা। আর বিকালে রাজধানীতে ছিল গণপরিবহনের সংকট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছে তাদের। এদিকে অতিবৃষ্টিতে ফের ডুবল চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। পানি জমে ক্ষতবিক্ষত সড়ক, গলি-উপগলি। তা ছাড়া উন্নয়ন কাজ ও নালা-নর্দমার মাটিতে সড়কগুলো কাদায় একাকার হয়ে যায়। অনেক সড়ক রূপ নেয় নরকে। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

বৃষ্টিতে রাজধানীতে ভোগান্তি, পরিবহন সংকট : দিনভর বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছে রাজধানীর বাসিন্দারা। সকালে অফিসযাত্রীরা বৃষ্টিতে ভোগান্তি পোহালেও বিকেলে পড়েছেন পরিবহন সংকটে। পরিবহনের অভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। গতকাল রাজধানীর পল্টন মোড়, মত্স্য ভবন, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেটসহ অন্যান্য বাসস্টপে একই চিত্র  দেখা গেছে। এ ছাড়া কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০, ১৪, পল্লবী, পূরবীর মূল সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে। এ ছাড়া টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নগরীর মতিঝিল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা, ফকিরাপুল, আরামবাগ, রামপুরা, গুলশান, বনানী, মহাখালী, উত্তরা, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, পুরান ঢাকার বংশাল, মালিটোলা, সদরঘাট, লক্ষ্মীবাজার, কুলুটোলা,  হেমেন্দ্র দাস রোড, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, রূপচান লেন,  গেণ্ডারিয়া, মিলব্যারাক, আরসিন গেটসহ আশপাশের এলাকার অলিগলি ছোটখাটো খালে পরিণত হয়। ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ লাইন উপচে পড়ে মলমূত্র। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পোস্তগোলা, সায়দাবাদ, মুগদা, বাসাবো, কমলাপুর, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ও মধ্যবাড্ডা এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে এলাকাবাসীকে রিকশা নিয়ে  বের হতে দেখা যায়। আর বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে রাস্তার মাঝখানে গণপরিবহন, প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিকল হয়ে পড়ে থাকতেও দেখা গেল।

আসিফ নামের একজন বলেন, জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছিলাম। মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকা থেকে রিকশায় করে কাজীপাড়ায় আসি। পুরো রাস্তা হাঁটু পর্যন্ত পানি, পলিথিনে  মোবাইল ফোনটি মুড়িয়ে এক ঘণ্টায় রাস্তা শেষ করে অবশেষে পৌঁছলাম।

পানিবন্দী বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বুঝতে পারিনি এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি। রিকশায় বসে ভাবছিলাম এ বুঝি পড়ে যাব। হাঁটুর ওপর পানি নামতেও পারি না। এ রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির ফলে গর্তও আছে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছিলাম। বিভিন্ন এলাকার ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় জমানো পানিতে যানবাহন চলাচল করায় টেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। মিরপুর কাজীপাড়া বাসিন্দা ফরহানা বলেন, সারাদিন টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়লে রাস্তার ধারের সব দোকানে পানি ঢুকে পড়ে। তাত্ক্ষণিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

দেখা গেছে, রাজধানীর কাকরাইল থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কে জলাবদ্ধতা ছিল গতকাল। ফলে চরম দুর্ভোগ  পোহাতে হয় যাত্রী ও চালকদের। দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে গাড়িচালকরা বিকল্প সড়ক হিসেবে বিজয়নগর হয়ে ফকিরাপুল, রাজারবাগ, খিলগাঁও হয়ে মালিবাগ রেলগেট সড়ক ব্যবহার করছেন। এরপরও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি নেই। কারণ মালিবাগ রেলগেট থেকে চৌধুরীপাড়া সড়কটির অবস্থাও একই। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে পথচারীদের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ  পোহাতে হচ্ছে। উঁচু-নিচু সড়ক দিয়ে যানবাহনের চাকার সঙ্গে কাদামাটির ছিটা পথচারীদের জামাকাপড় ও আশপাশের দোকানগুলোতে গিয়ে পড়ছে।

চট্টগ্রামে অতিবর্ষণে অন্তহীন ভোগান্তি         

চট্টগ্রামে অতিবর্ষণে অন্তহীন ভোগান্তির কবলে পড়ছে নগরবাসী। বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নগরের নিম্নাঞ্চলে। পানি জমে ক্ষতবিক্ষত সড়ক, গলি-উপগলি। তা ছাড়া উন্নয়ন কাজ ও নালানর্দমার মাটিতে সড়কগুলো কাদায় একাকার হয়ে যায়। অনেক সড়ক রূপ নেয় নরকে। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। তবে ঈদ উৎসব সামনে থাকায় ভোগান্তির ধরনটা দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানা যায়। ঈদ কেন্দ্রিক কেনাকাটার যে ধুম পড়ে- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রবল বর্ষণে তা দারুণভাবে ভাটা পড়েছে বলে ক্রেতারা বলেন। গত রবিবার ও গতকাল সোমবারও নগরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে।  

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল বিকাল ৩টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টিও হয়।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে ভারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে অতি ভারি বর্ষণও হতে পারে। তা ছাড়া আগামী কয়েকদিনও এরকম বৃষ্টি হতে পারে।’

সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ে। তবে দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় ভারি বর্ষণ। তবে বিকালে বৃষ্টির মাত্রাটা আরও বেড়ে যায়। এ সময় পুরো আকাশজুড়ে নেমে আসে কালো মেঘের অন্ধকার। সঙ্গে ছিল বজ্রপাত ও দমকা হাওয়া। অনেক যানবাহনকে গাড়ি লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতেও দেখা যায়। এ সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় মার্কেটগামী ক্রেতাদের। অন্যদিকে, প্রবল ও গুড়ি গুড়ি বর্ষণের ফলে সড়কগুলো হয়ে ওঠে নরকে। উন্নয়ন কাজ, পাইলিংয়ের মাটি, নালা-নর্দমা থেকে তুলে রাখা মাটি সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এতে সড়কজুড়ে কাঁদা মাটিতে একাকার হয়ে যায়। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, দুই নং গেট থেকে বায়েজিদ সড়কের অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। ফ্লাইওভারের নির্মাণাধীন র্যামের কারণে এ সড়ক দিয়ে চলাও দায়। নগরের বহদ্দারহাট থেকে মোহরা পর্যন্ত সড়ক দিয়ে যান চলাচল করছে ‘নৌকা স্টাইলে’ হেলিয়ে দুলিয়ে। কোতোয়ালি থেকে নতুন ব্রিজ মোড় পর্যন্ত সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রিক্সা, অটোরিক্সা ও অটোটোম্পা চলাচল করা চরম দুস্কর। পড়্গান্ত্মরে, গতকালের বর্ষণে নগরের অনেক নিন্মাঞ্চল পস্নাবিত হয়। এ সব এলাকার মানুষ গত ২০ দিনে অন্তত তিনবার জলাবদ্ধতার শিকার হয়। একবারের ক্ষত শুকাতে না শুকাতে আরেকবার জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গতকাল নগরের ষোলশহর দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ, ছোটপুল, বড়পুল, হালিশহর, রামপুরা, বাকলিয়া, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সংস্কারে অতিরিক্ত জনবল দিয়ে কাজ চলছে। আমরা চেষ্টা করছি, ঈদের আগেই ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করতে। তবে বৃষ্টির কারণে কাজে একটু বেগ পেতে হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর