মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘সবচেয়ে নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে রূপপুর’

পর্দা উঠল অ্যাটম এক্সপোর

জিন্নাতুন নূর, মস্কো (রাশিয়া) থেকে

পাবনার রূপপুরে নির্মিতব্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা। গতকাল রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে নবম আন্তর্জাতিক অ্যাটম এক্সপো-২০১৭ এর উদ্বোধনী দিনের আলোচনায় এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। পারমাণবিক জ্বালানি খাতের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ প্রদর্শনীটির আয়োজক রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটম। এবার প্রদর্শনীতে ৬২টি দেশের ৬০০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এই অনুষ্ঠানের একটি অংশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আমরা এখন মাটি স্থিতিশীল করার কাজ করছি। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনে রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিকহাচেভ আরও বলেন, এশিয়ায় বাংলাদেশের মতো যে দেশগুলো বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে চাচ্ছে তাদের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে রাশিয়া সরকার আগ্রহী। একই সঙ্গে দেশটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পারমাণবিক জ্বালানি খাতের নিরাপত্তার বিষয়েও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে বলে মন্তব্য করেন।

গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে গোলটেবিল আলোচনা, বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর  ও পারমাণবিক জ্বালানি খাতের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পণ্যের প্রদর্শনী করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রোসাটমের সুপারভিশরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডাইরেক্টর জেনারেল সারজেই কিরেনকো, ডাইরেক্টর জেনারেল আলেক্সি লিকহাচেভ এবং ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল ডাইরেক্টর এজেন্টা রাইসিং বক্তব্য দেন। তারা বলেন, গত ২৫ বছরে এ খাতে আমাদের লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ। এবার ৬৪টি দেশের পারমাণবিক বিশেষজ্ঞরা অ্যাটম এক্সপোতে অংশ নিয়েছেন। এখন সময় এসেছে সারা বিশ্বের মিশ্র জ্বালানি ব্যবহার করার। যার মধ্যে অন্যতম জ্বালানি হবে পারমাণবিক জ্বালানি। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করলেও এশিয়ার দেশগুলো এখন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছে। এ ছাড়াও তিন দিনের অ্যাটম এক্সপোতে মোট ২১০ জন বিশেষজ্ঞ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নেবেন। গতকালের সেমিনারে বক্তারা জানান, পৃথিবীর মোট ১৭ শতাংশ পারমাণবিক জ্বালানি খাতের শেয়ার এখন রোসাটমের। তারা আধুনিক পারমাণবিক জ্বালানি প্রযুক্তি নির্মাণের পাশাপাশি কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। একই সঙ্গে রাশিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিভিন্ন দেশে যে অর্থ সাহায্য দিচ্ছে তা দীর্ঘমেয়াদে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। সাংবাদিকদের জানানো হয়, বিভিন্ন দেশের ১০০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। আর প্রদর্শনীতে চিকিৎসাবিষয়ক প্রযুক্তি, রোবট, বিভিন্ন পারমাণবিক কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি প্রদর্শিত হয়। গতকাল প্রথম দিনের পেলেনারি সেশনে আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘পারমাণবিক জ্বালানি হবে ভবিষ্যতের কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ খাতের মূল ভিত্তি’। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ অ্যাটম এক্সপোতে অংশগ্রহণ করছে। এবার নতুন দেশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানে আরও অংশ নিয়েছে সুদান, কঙ্গো, ইথোপিয়া এবং কলম্বিয়া। জানা যায়, সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ মহল, শিক্ষার্থীসহ মোট  পাঁঁচ হাজারের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে। আজ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনেও গোলটেবিল বৈঠক এবং বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। জয়েন্ট-এক্সপোর্ট নিজনি নভগোরোদ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ভেলোরি আই লিমারেনকো অনুষ্ঠানের একটি অংশে বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ে আমি কোনো ভাবগম্ভীর ব্যাখ্যা দেব না। আমরা এখন মাটি স্থিতিশীল করার কাজ করছি। আপনারা জানেন যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সলিড মাটির ওপর তৈরি করা হচ্ছে। আমরা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি যেখানে রাশিয়ার পাশাপাশি ফ্রান্সের বিশেষজ্ঞরাও কাজ করছেন। নভোভেরোনেজ এনপিপির নকশা এতে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর নিরাপত্তার দিক দিয়ে এটি হবে সবচেয়ে নিরাপদ।

সর্বশেষ খবর