মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গি ইমরানের সঙ্গে বনানীর দুই যুবকের যোগাযোগ

সাখাওয়াত কাওসার

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক গার্মেন্ট মালিক ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বনানী থেকে নিখোঁজ দুই তরুণ তাওহীদুর রহমান (২৬) ও ইমাম হোসেন ওরফে রাশেদের (২৭)। তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ইমরানের সঙ্গে। এর মধ্যে ইমাম আরবি শেখাতেন ইমরানকে। শুধু তাই নয়, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তাওহীদ ও ইমাম মহাখালী পানির ট্যাংকির কাছে ইমরানের ৬৭/৭ নম্বর বাসায় নব্য জেএমবির সামরিক বিভাগের কমান্ডার আইয়ূব বাচ্চু ওরফে সাজিদ ওরফে লাল ভাইকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ২৬ মে রূপগঞ্জ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় (৭২ নম্বর) এরই মধ্যে জঙ্গিবাদে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে ইমরান আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৬৪ ধারার ওই জবানবন্দিতে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন বলে আদালত সূত্র নিশ্চিত করেছে। ১০ জুন জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে পোশাক তৈরির কারখানা ‘জিম টেক্স’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইমরান আহমেদকে তার গাড়িচালক শামীম মিয়াসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইমরানকে আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ দিতেন ইমাম। দুই বছর ধরে ইমরানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তাদের। জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় শূরা সদস্য ও সামরিক কমান্ডার আইয়ূব বাচ্চু ওরফে লাল ভাই ওরফে সাজিদকে গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ইমরানের মহাখালীর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন তাওহীদ ও ইমাম। এর কিছু দিন আগে সাজিদের অবস্থান ছিল সিলেটের আতিয়া মহলে। ইমরানের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রাখার প্রয়োজনে ইমরানকে আরবি ভাষা শেখাতেন ইমাম হোসেন। ইমাম শুরুর দিকে হুজিবির (হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ) সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে সারোয়ার-তামীম গ্রুপে যোগ দেন। একপর্যায়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুসারে ইমাম ও তাওহীদ হিজরতের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে র‌্যাব-১১-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গ্রেফতার ইমরানের কাছে ইমাম ও তাওহীদের নাম পাওয়া গেছে। আমরাও তাদের খুঁজছি।’ এদিকে, গতকাল পর্যন্ত বনানী থেকে নিখোঁজ হাসান মাহমুদ তারেক, কামাল হোসেন, তাওহীদুর রহমান ও ইমাম হোসেনের সন্ধান মেলেনি। তাদের কেউ অপহরণ করেছে না তারা স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়েছে— পুলিশ তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, নিখোঁজ এই চার যুবক গেলেন কোথায়? পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘বনানী থেকে নিখোঁজ যুবকরা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন কিনা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ এদিকে চার যুবকের এখনো সন্ধান না পাওয়ায় তাদের স্বজনরা ভেঙে পড়ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও সেভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে না বলে পরিবার অভিযোগ করেছে। নিখোঁজদের স্বজনরা প্রিয়জনকে খুঁজে পেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দোরে দোরে ঘুরছেন। কোনো কিনারা না হওয়ায় এ নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে। এ ঘটনায় রাজধানীর বনানী থানায় হওয়া সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও এলিট ফোর্স র‌্যাব। এ ছাড়া এ ঘটনা খতিয়ে দেখছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। শুক্রবার মুক্তিপণ দাবি করা মোবাইল নম্বরগুলো তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে পরিবার। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে এখন পর্যন্ত বলার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর