মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

বিদেশে যাচ্ছে নওগাঁর টুপি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

বিদেশে যাচ্ছে নওগাঁর টুপি

নওগাঁর নারী কারিগরদের টুপি এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের বাজার দখল করেছে। এ টুপি যাচ্ছে সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। ঈদকে সামনে রেখে এখন এই কারিগরদের মাঝে দারুণ ব্যস্ততা। সারা বছর টুপি সেলাইয়ের টুকটাক কাজ হলেও রমজান এবং ঈদে এই ব্যস্ততা বেড়ে যায়। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার অনেক নারী আগে সংসারের কাজ সেরে দিনের অনেকটা সময় ঘরে বসে বা পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্পগুজবে কাটাতেন। কিন্তু এখন তারা টুপি তৈরিতে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে, কারও সঙ্গে কথা বলারও সময় পান না। গৃহবধূসহ স্কুল-কলেজে পড়ুয়া মেয়েরাও টুপি তৈরির কাজ করেন। উপজেলার সিদাইন গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের প্রায় ৯৫ শতাংশ পরিবারের নারীই টুপি তৈরির কাজে যুক্ত। শুধু সিদাইন নয়, পাশের আমইল, পাইকড়া, ধর্মপুর ও ছাতড়াসহ ১০/১২টি গ্রামের নারী আজ তাদের দেখাদেখি টুপি তৈরি করছেন। এইসঙ্গে মহাদেবপুর উপজেলার সুলতানপুর, শিবগঞ্জ, তাতারপুর, হরমনগর, মধুবন, উত্তরগ্রাম, কুঞ্জবনসহ বিভিন্ন গ্রামে নারীরাও টুপি তৈরি করছেন।  টুপি কারিগর গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন ও মোরশেদা বেগম বলেন তিনি সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এ টুপি তৈরির করেন। তবে রমজান এবং সামনে ঈদের জন্য ব্যস্ততা একটু বেশি। মূলত বোতাম সেলাই ও চেইন সেলাই দিয়ে টুপি তৈরি করা হয়। বোতাম সেলাই টুপির পরিশ্রম একটু বেশি এবং পারিশ্রমিক ৪০০-৫৫০ টাকা। তৈরিতে সময় লাগে ১৫/২০ দিন। চেইন সেলাই টুপি সহজ ও সময় কম লাগে। কাজও দ্রুত হয়। এর পারিশ্রমিক ৩০০-৩৫০ টাকা। তবে পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক খুবই কম। ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রুমি সুলতানা জানায়, পড়াশুনার পাশাপাশি সে টুপি তৈরির কাজ করে। এ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে কাগজ-কলম ও হাতখরচসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় হয়। উপজেলার মধুবন গ্রামের গৃহবধূ সাজেদা খাতুন বলেন, এক থান কাপড় থেকে প্রকারভেদে ৯০-১০০টি টুপি তৈরি হয়। পলিথিনের কাগজে সোনামুখি সুই দিয়ে বিভিন্ন ফুলের গ্রাফিক্স করা হয়। এরপর সাইজ করা টুপির কাপড়ে গ্রাফিক্স পলিথিন রেখে তেল ও ব্লু (নীল রং) দিয়ে ছাপ দেওয়া হয়। ছাপ দেওয়া ফুলের উপর সেলাই মেশিন দিয়ে সেলাই করা হয়। এ কাজটি করতে ১-২ দিন সময় লাগে। যার মজুরি পান ৭০০ টাকা। এরপর এ টুপিগুলো বিভিন্ন কারিগরের কাছে হাতের কাজ করতে দেওয়া হয়। মহাদেবপুরের টুপি ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম বলেন, আগে শুধু এক ডিজাইনের টুপি তৈরি হতো। এখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টুপিরও বাহারি নাম ও ডিজাইন দেওয়া হয়েছে। যেমন নব্বইফুল, কলারফুল, বকুলফুল, তালাচাবি, স্টার, গুটি, বিস্কুট, আনারস, মৌচাক ও মাকড়শার জাল। সবচেয়ে বেশি দাম নব্বইফুল ও আনারসের। এসব টুপি ঢাকার চকবাজার, বাইতুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে পাঠানো হয়। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে রপ্তানি হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর