বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাহারি নামের পোশাকেই চোখ

বরিশালের ঈদ বাজার

রাহাত খান, বরিশাল

বাহারি নামের পোশাকেই চোখ

কয়েক বছর ধরে দেশের পোশাক বাজার ভারতের দখলে। ভারতের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত কোনো আলোচিত সিরিয়াল কিংবা মুম্বাইর সাড়া জাগানো সিনেমার নামের পোশাকে আগ্রহ সবার। এবারও ভারতের তৈরি পোশাক বাহুবলী-২, রাখীবন্ধন, মহারানী ও দীপসেনায় মজেছেন বরিশালের তরুণী-যুবতীরা। বিভিন্ন বয়সের নারীদের আকর্ষণ বাহারি নামের শাড়ির দিকে। বরাবরের মতো এবারও পুরুষের প্রধান পছন্দ নানা রং ও ডিজাইনের পাঞ্জাবি। বরিশালে অন্যান্য বছর মধ্য রমজানের পর থেকে ঈদ বাজারের দৃশ্যমান কেনাকাটা শুরু হলেও এবার প্রথম সপ্তাহের পরই মার্কেটমুখী দেখা গেছে। এখন ঈদের কেনাকাটা তুঙ্গে। একবারে শেষ সময়ের কেনাকাটায় ব্যস্ত বরিশালের আপামর মানুষ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর সদর রোড, হেমায়েত উদ্দিন রোড, ফজলুল হক এভিনিউ, চকবাজার এবং কাঠপট্টির অভিজাত পোশাক মার্কেটগুলোতে উচ্চবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। এসব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির পোশাকও। অপরদিকে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের পোশাক বাজারের ভরসা জেলা পরিষদ পুকুর পাড়ের ভাসমান দোকান, হাজী মহসিন হকার্স মার্কেট ও সিটি হকার্স মার্কেট। নগরীর হেমায়েত উদ্দিন রোডের তালুকদার গার্মেন্টের স্বত্বাধিকারী হান্নান তালুকদার বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার মেয়েদের পোশাকের দাম তুলনামূলক কম। এবার তরুণী ও যুবতীদের পোশাকের প্রধান আকর্ষণ বাহুবলী-২, রাখীবন্ধন, মহারানী, দীপসেনা, সারা-রা, গোল জর্জেট, গাউন, টপস এবং লেহেঙ্গা। কাপড় ও ডিজাইন ভেদে বাহুবলী-২ বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়, রাখীবন্ধন দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার, দীপসেনা ৭ থেকে ৮ হাজার, সারা-রা ৩ থেকে সাড়ে ৬ হাজার, মহারানী আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার, গোল জর্জেট আড়াই হাজার থেকে ৪ হাজার, গাউন দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার এবং লেহেঙ্গা পাওয়া যাচ্ছে ৩ থেকে ৮ হাজার টাকায়। তবে বাহুবলী-২, রাখীবন্ধন, মহারানী, দীপসেনাসহ ভারতীয় এসব পোশাকের কাপড়ের মান, ডিজাইন ও নকশা এবং দোকান ভেদে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। উচ্চবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা দাম নিয়ে চিন্তিত নয়, তারা পোশাকের মান ও নান্দনিকতায় সন্তুষ্টি খুঁজছেন। অপরদিকে এবারের ঈদ বাজারে নারীদের মূল আকর্ষণ কাতান ও জামদানি শাড়ি। ২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় এসব শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নগরীর চকবাজারের শাড়ির দোকান স্বদেশী’র নিখিল দাস।

ঈদ বাজারে ছেলেদের জন্য রয়েছে বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, প্যান্ট ও শার্ট। সুতি পাঞ্জাবি ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, জর্জেট পাঞ্জাবি দেড় হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়, ভারতীয় সিল্ক পাঞ্জাবি ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায়। জামদানি পাঞ্জাবি ৭০০ থেকে ১৬০০ টাকায়, টিস্যু পাঞ্জাবি সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বলে দোকানিরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ঈদ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দাম ও মানের প্যান্ট, শার্ট ও ফতুয়া। দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় ভালোমানের শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ঈদ বাজারে। দেড় থেকে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে প্যান্ট। গরমের কারণে এবার হালকা নকশায় পাতলা বা সুতি কাপড়ের পোশাক শিশু সন্তানদের জন্য পছন্দ মা-বাবাদের। শুধু পোশাক নয়, ঈদ বাজারে বিকিকিনি বেড়েছে কসমেটিক্স, ওড়না-হিজাব ও পাদুকারও। আগামী কয়েক দিনে ঈদ বাজারে ক্রেতার ভিড় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ঈদ বাজারে ক্রেতাসহ নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। ক্রেতার ভিড় সামলাতে আরও ১ সপ্তাহ আগে থেকে চক বাজার রোডে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক স্থানগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে পোশাকধারী পুলিশ। এ ছাড়া সাদা পোশাকধারী পুলিশ এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরাও কঠোর নজরদারি করছেন। মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, ঈদ বাজারের ক্রেতা এবং নগরবাসীর নিরাপত্তায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর