শনিবার, ২৪ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

লতিফ বিশ্বাস বনাম তরুণ আলীম

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

লতিফ বিশ্বাস বনাম তরুণ আলীম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট-মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ, পোস্টার, সাইনবোর্ড লাগিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন, ফেসবুক-টুইটার ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়ে জানান দিচ্ছেন। তবে সিরাজগঞ্জের যে কোনো আসনেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সিরাজগঞ্জের ৬টি আসনে (সংসদীয় আসন ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬ ও ৬৭) ইতিমধ্যে প্রায় ৫৫ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট ও বিএনপি সমর্থিত ২০-দলীয় জোটে অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকায় সব আসনেই দুটি জোটের পক্ষ থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পেতে দলের হাইকমান্ডে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ সদরের একাংশ) কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে এ আসনে রয়েছে আওয়ামী লীগের শক্ত সাংগঠনিক শক্তি। বেশ কয়েকবার তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। যদি কোনো কারণে এবার তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করেন বা অন্য আসনে প্রার্থী হন তবে তার পরিবর্তে তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার তানভীর শাকিল জয় মনোনয়ন পেতে পারেন। ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা তালুকদার, শহর বিএনপির সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, জেলা বিএনপির সদস্য টি এম তহিজবুল এনাম তুষার ও দেশের স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা মনোনয়ন চাইবেন।   

সিরাজগঞ্জ-২ (সদরের একাংশ ও কামারখন্দ) জেলা সদর থেকেই জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। সিরাজগঞ্জ সদরের ৬টি ও কামারখন্দ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন মিলে সিরাজগঞ্জ-২ আসন গঠিত। এবার এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, আওয়ামী লীগ নেত্রী জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ও জাতীয় যুব সংহতির সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম ঝন্টু। ২০-দলীয় জোটের একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয়  বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। কোনো কারণে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে তার সহধর্মিণী ও জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) : মত্স্য ও শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা মিলে এ আসনটি গঠিত। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য গাজী ম. ম. আমজাদ হোসেন মিলন। এ ছাড়া নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ)  নেতা অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য লুত্ফর রহমান দিলু, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুইট, সাবেক সংসদ সদস্য ইসহাক তালুকদারের ছেলে ইমন তালুকদার, তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হক, সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হান গফুর, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম হৃদয়, ব্রিগেডিয়ার (অব.) নজরুল ইসলাম, আবদুল হান্নান খান ও আবদুর হাদী আলমাজি জিন্নাহ। অন্যদিকে ২০-দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সাবেক এমপি আবদুল মান্নান তালুকদার, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম শিশির, তাড়াশ উপজেলা বিএনপি নেতা খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর, উপজেলা চেয়ারম্যান আইনুল হক ও ঢাকা আইনজীবী ফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা।

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) এ আসনে মহাজোট থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান এমপি তানভীর ইমাম আবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়াও সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা  মারুফ বিন হাবিব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী জাহেদুল ইসলাম, সাবেক এমপি আবদুল লতিফ মির্জার  মেয়ে মুক্তি মির্জা এবং শফিও মনোনয়ন প্রত্যাশী। ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি এম আকবর আলীর পাশাপাশি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী কামাল, নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য আবদুল ওয়াহাব, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা কে এম শরফউদ্দিন মঞ্জু, সলঙ্গা থানা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার রহমান সরকার ও জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম খান।

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি ও চৌহালী) তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি ও যমুনা নদীবেষ্টিত চৌহালী উপজেলা মিলে সিরাজগঞ্জ-৫ আসন গঠিত। এ আসনে মহাজোট থেকে শক্তিশালী প্রার্থী বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। এ ছাড়াও বর্তমান এমপি আবদুল মজিদ মণ্ডল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মোহন ও ঢাকার বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহপ্রচার সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমই সম্ভাব্য প্রার্থী। গত কয়েক বছর ধরে তিনি নিজ সংসদীয় এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও বিএনপি নেতা গোলাম মওলা খান বাবলু, জেলা বিএনপির সদস্য রাকিবুল করিম পাপ্পু ও চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মামুনও গণসংযোগ করছেন।

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) শাহজাদপুরের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বর্তমান এমপি হাসিবুর রহমান স্বপন আগামী নির্বাচনেও দলীয় টিকিট পেতে তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও সাবেক এমপি চয়ন ইসলাম ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. সাজ্জাদুল হায়দার লিটন মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট থেকে সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ডা. এম এ মতিনের ছেলে তরুণ চিকিৎসক এম এ মুহিত, সাবেক এমপি কমরুদ্দিন এহিয়া খান মজলিশ ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি গোলাম সরোয়ারের নাম শোনা যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর