নতুন ভ্যাট আইন-২০১২ স্থগিত হচ্ছে। ১৯৯১ সালের পুরনো মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ব্যবস্থা বহাল রাখা হবে। উল্লিখিত ব্যবস্থা রেখে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আগামী ২৯ জুন জাতীয় সংসদে পাস হবে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে।
পাশাপাশি গ্রাহকদের ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণাও কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজেট পাসের এক দিন আগে ২৮ জুন প্রস্তাবিত বাজেটের যাবতীয় সংশোধনীসহ তা বাস্তবায়নের নানা দিক তুলে ধরে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওইদিনই সংসদে অর্থবিল-২০১৭ পাস করা হবে। এ বাজেট কার্যকর হবে ১ জুলাই-২০১৭ থেকে। নতুন আইনে একক ভ্যাট রেট ১৫ শতাংশের তীব্র বিরোধিতা আর সমালোচনার মুখে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে সরকার। ফলে পুরনো আইনের বহুস্তর ভ্যাট ব্যবস্থাই কার্যকর থাকছে নতুন বাজেটে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় যে ১৫টি সেবা খাতে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট আছে, সেগুলোয় আগামী অর্থবছরও একই হার কার্যকর থাকছে। তবে এসব পণ্য ও সেবার মধ্যে কোনোটির ওপর ভ্যাট কিছুটা বাড়তে পারে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হওয়া বেশকিছু পণ্য ও সেবাকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে বাজেট পাসের সময়।
নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হলে নতুন বাজেটের আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও কিছু সংশোধনী আনতে হবে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার কমাতে হতে পারে। ৯১ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখান থেকে ৬৮ হাজার কোটি টাকা কম আদায়ের নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে বাজেটের সামগ্রিক ঘাটতি বেড়ে যাবে, যা প্রস্তাবিত বাজেটে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তবে তা বছর শেষে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। বাজেট পাসের আগমুহূর্তে এসব অঙ্ক ঘষামাজা করে ঠিক করা হচ্ছে। আর এই ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংক ঋণ গ্রহণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি এবং বৈদেশিক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে। সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা শেষ পর্যন্ত কার্যকর নাও হতে পারে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হলে বিক্রিতে ভাটা পড়বে, যা বাজেটের অর্থায়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত আরেকটি বিষয় হলো ব্যাংকে আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা। এখন ২০ হাজার ১ টাকার বেশি রাখলেই আবগারি শুল্ক দিতে হয়। অর্থমন্ত্রী তা বাড়িয়ে ১ লাখ ১ টাকা নির্ধারণ করে আবগারি শুল্কের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সমালোচনার মুখে অর্থমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, শুল্ক বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছিল তা সংশোধন করে অন্য নামে এ কর কাটা হবে। ব্যাংক আমানতের ওপর এ মুহূর্তে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়বিমুখ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। ফলে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকেও সরে দাঁড়াচ্ছে সরকার।