বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় উপচে পড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিনোদন কেন্দ্রগুলোয়  উপচে পড়া ভিড়

মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় নেমেছিল বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থীর ঢল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীসহ সারা দেশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে এখন মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে তিন দিন ধরে এ অবস্থা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরও কয়েক দিন এমন ভিড় থাকতে পারে।

রাজধানীর শাহবাগ শিশুপার্ক, শ্যামলী শিশুপার্ক, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, টিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বলধা গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, হাতিরঝিলসহ সব বিনোদনকেন্দ্র এখন জনসমুদ্রে জমজমাট। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, জাতীয় উদ্যান, ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক, সোহাগপল্লী, নক্ষত্রবাড়ী, গ্রিন ভিউ, নরসিংদীর ড্রিম হলিডেসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রেও রয়েছে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়।

সরেজমিন গতকাল দেখা গেছে, রাজধানীর রাস্তাঘাট আর অফিস-আদালত ফাঁকা থাকায় সবার গন্তব্য ছিল বিনোদন কেন্দ্রমুখী। রামপুরা থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে শাহবাগের শিশুপার্কে এসেছিল সাত বছর বয়সী শিশু তন্ময়। পার্কে এসে কেমন লাগছে— এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, ‘শিশুপার্ক আমার খুবই পছন্দের। তাই বাবা-মার সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। অ্যারোপ্লেন ও ট্রেনে উঠেছি। আরও কয়েকটি রাইডে উঠব।’ কথার ফাঁকে ছোট্ট এই শিশুটি তার বাবার কাছে আবদার করে ‘পার্ক থেকে বের হওয়ার পর তাকে খেলনা গাড়ি কিনে দিতে হবে।’ একই চিত্র ছিল শ্যামলী শিশুপার্কে। ৯ বছরের মাইশা যখন তার বাবার কাছে ভিডিও গেম কিনে দেওয়ার আবদার করছিল, তখন তারা বাবা বলছিলেন— ‘ঠিক আছে মামনি, আমরা পার্ক থেকে বের হয়ে তোমাকে গেম কিনে দেব।’ কতগুলো রাইডে উঠেছ— জানতে চাওয়া হলে শিশু মাইশা বলে, ‘এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি রাইডে উঠেছি, আরও কয়েকটি রাইডে উঠব।’ শুধু শিশুরাই নয়, বড়দেরও রাইডে চড়তে দেখা গেছে। বিশেষ করে বেশির ভাগ বাবা-মাই সন্তানসহ রাইডে উঠে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। সপরিবারে এ আনন্দের সঙ্গে ভবিষ্যতের সাথী হিসেবে তরুণ-তরুণীরাও মেতে ওঠে ভিন্ন আনন্দে। একান্তে সময় কাটানোর পাশাপাশি প্রিয় মুহূর্তকে সেলফিতে ধরে রাখতেও কার্পণ্য করেননি প্রেমিকযুগলরা। গাজীপুরে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও ছিল দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। ঈদের দিন, ঈদের পরের দিন, এমনকি গতকালও হাজার হাজার দর্শনার্থী বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আসে বিনোদন পেতে। রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিনোদন পেতে ভিড় করে এ পার্কে। বিশেষ করে এখানে সরাসরি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, ভাল্লুক, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, হাতি ইত্যাদি আলাদাভাবে সীমানা প্রাচীরের ভিতর উন্মুক্তভাবে দেখতে সবচেয়ে বেশি ভিড় করে। শুধু তাই নয়, জমজমাট ছিল সাফারি কিংডম। এখানে ভিড় ছিল ময়ূর, ধনেশ, ক্রাউন্ট ফিজেন্টসহ দেশি-বিদেশি পাখি ও প্রজাপতি কর্নার, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, মেরিন অ্যাকুরিয়াম, ইমু গার্ডেন, মেকাউ ওপেন ল্যান্ড, লেকজোন, কুমির পার্কে। এ সময় কথা হয় টাঙ্গাইল থেকে আসা সোহাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় ছুটি একটু বেশি থাকায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এখানে আসি বিভিন্ন প্রাণী সরাসরি দেখতে। তবে এখানে পড়তে হয়েছে নানা ভোগান্তিতে।’ পার্কের ইনচার্জ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা আগের দিনকে ছাড়িয়ে যায়। পার্কের দর্শনার্থীর আকর্ষণ কোর সাফারি পার্কে।’ অপরদিকে বিনোদন উপভোগে ভিড় করতে দেখা গেছে বিভিন্ন রিসোর্টেও। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার অতি নিকটে হওয়ায় গাজীপুরের রিসোর্টগুলো ছিল বেশি জমজমাট। ফলে শহরের পাশেই ছুটি রিসোর্টে ঈদের দিন থেকে পুরো এক সপ্তাহ নেই কোনো খালি কটেজ। ঈদের দিন বিকাল থেকে রয়েছে দর্শনার্থীর প্রচণ্ড ভিড়। ছুটি রিসোর্টের পরিচালক আলমগীর ফেরদৌস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজধানীর অতি নিকটে থাকায় গাজীপুরে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় বেশি।’ তিনি বলেন, ‘গাজীপুর শুধু শিল্পাঞ্চলই নয়, এখন পর্যটন নগরীতেও পরিণত হয়েছে।’

বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

কক্সবাজার : ঈদের ছুটিতে এখন লাখো পর্যটকে মুখর দেশের প্রধান পর্যটননগর কক্সবাজার। শহরের হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস পর্যটকে ঠাসা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী দু-এক দিনে আরও কয়েক গুণ বাড়তে পারে পর্যটক। জানা গেছে, ঈদের দিন থেকে পরের এক সপ্তাহে কক্সবাজারে ৩৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের।

খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, ঈদের দিন থেকে টানা ৯ দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতে ভিড় করেছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক চালু হওয়ার পর সকাল-সন্ধ্যা ছুটে বেড়াচ্ছেন পর্যটক। অধিকাংশই এসেছেন প্রিয়জন সঙ্গে নিয়ে। কক্সবাজারের তারকা হোটেল সি-গাল-এর প্রধান নির্বাহী ইমরুল সিদ্দিকী রুমী জানান, ১৩ জুন পাহাড়ধসের কারণে এবার অনেক পর্যটক তিন পার্বত্য জেলায় যাচ্ছেন না। যার কারণে গত বছরের চেয়ে এবার কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় বেশি। ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারে এক লাখেরও বেশি পর্যটক অবস্থান করছেন। ঈদের ছুটিতে সপ্তাহব্যাপী এবার ১০ লাখ পর্যটক হবে বলে আশা তাদের। কক্সবাজার হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ও ‘দ্য কক্স টুডে’ হোটেলের পরিচালক (অপারেশন) মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, ২৯ জুন ঈদের তিন দিন পর্যন্ত পর্যটন জোন কলাতলীর প্রায় সব হোটেল বুকিং হয়ে গেছে। তাদের আশা, ঈদের পরের সাত দিন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন। গত বছর ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন অন্তত ৫ লাখ পর্যটক।

কক্সবাজার কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমদ বলেন, সমিতির আওতাভুক্ত ১১৭টি কটেজের ৯৫ শতাংশই পর্যটকে ভরপুর। ২৯ জুন পর্যন্ত এ অবস্থা বজায় থাকবে। তিনি আরও জানান, কম দামে কক্ষ পাওয়া যায় বলে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন কটেজে ওঠেন বেশি। মাঝারি মানের হোটেলের কক্ষেও পর্যটকরা অবস্থান করেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কক্সবাজারে এসে পর্যটকরা যাতে বিড়ম্বনার শিকার না হন এবং হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সেজন্য চারজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ টিমও গঠন করা হয়েছে। তা ছাড়া শহরের হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ, যানবাহনসহ টমটম-রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধে মূল্য তালিকা টানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) : ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটায় ঢল নেমেছে বিভিন্ন বয়স ও ধর্মবর্ণের মানুষের।

তাদের মধ্যে ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র রাফিউল জানান, ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে তিনিসহ তার বন্ধুরা কুয়াকাটায় এসেছেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ তারা সবাই। এ ছাড়া বরিশাল থেকে বেড়াতে যাওয়া পর্যটক প্রিন্স কামালের অভিযোগ, কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পর্যটকরা মুগ্ধ হলেও সৈকতের অব্যবস্থাপনা, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উগ্র আচরণ, হোটেল-রেস্তোরাঁয় গলা কাটা ভাড়া-বিল আদায়, অপ্রশস্ত ও ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট এবং আনন্দ উপকরণের অভাব রয়েছে। পর্যটক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কুয়াকাটা চৌরাস্তা থেকে সৈকতের দিকের পাকা রাস্তা থেকে সৈকতে নামলেই একটি পুরনো ভবনের বেশকিছু পিলার পড়ে আছে। সমুদ্রে ভাটার সময় পর্যটকরা এসব পিলার দেখেশুনে চলতে পারলেও জোয়ারের সময় কারও চোখে পড়ে না। এ অবস্থায় কোনো পর্যটক সৈকতে নামলেই পায়ে-হাঁটুতে আঘাত পান। প্রতিদিন পর্যটকরা হতাহত হন। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত পিলারগুলো এভাবে সৈকতে পড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই।

নওগাঁ : ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের দিন বিকাল থেকে নওগাঁর পাহাড়পুর, দিবরদীঘি, আলতাদীঘি, শালবন, কুসুম্বা মসজিদসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দর্শনার্থীর আগমনে মুখরিত রয়েছে। আর এই দর্শনীয় স্থানগুলোয় হোটেল-রেস্তোরাঁ, কসমেটিকস ও ঝিনুকের বর্ণিল সাজে সাজিয়েছেন দোকানিরা। এদিকে ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাহাড়পুরকে নতুনভাবে উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা। ঐতিহাসিক পাহাড়পুরের নতুন উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ শেষ হওয়ায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আর এসব নতুন উন্মুক্ত কাজের মধ্যে রয়েছে সৌন্দর্যবর্ধনশীল ও আকর্ষণীয় মূল প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বারের দক্ষিণ পাশের কক্ষে রয়েছে প্রত্নসামগ্রী ও বই। উত্তর পাশের কক্ষে টিকিট কাউন্টার। তার পাশে মহিলা ও পুরুষ টয়লেট।

কুমিল্লা : এবার ঈদের ছুটিতে কুমিল্লার শালবন বিহারসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় ভিড় করছেন কুমিল্লা ও আশপাশের জেলার দর্শনার্থী। কুমিল্লায় অন্যতম আকর্ষণ শালবন বিহার ও নগরীর ধর্মসাগর পাড়। ঈদের ছুটিতে গতকালও শালবন বৌদ্ধ বিহারের পার্কিংয়ে শতাধিক প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন দেখা গেছে। বিহারে শিশুদের নিয়ে প্রবেশ করেছেন অভিভাবকরা। লালমাই পাহাড় ও মহানগরীর বেসরকারি পার্কগুলোতেও ভিড় রয়েছে। তবে টিকিটের উচ্চ মূল্য হওয়ায় সকল শ্রেণির দর্শনার্থী সেখানে যেতে পারছেন না। এদিকে মহানগরীর ধর্মসাগর পাড়ে আড্ডা দিতে এবং নৌকায় চড়তে মানুষ ভিড় করেছেন। নগর উদ্যানেও শিশুসহ অভিভাবকের ভিড় দেখা গেছে। এ ছাড়া কুমিল্লার সদর দক্ষিণে লালমাই পাহাড়ের শীর্ষ চণ্ডী মন্দির, সদর দক্ষিণের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লাগোয়া রাজেশপুর ফরেস্টবিট, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ওয়ার সিমেট্রি, জেলার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ে ডাকাতিয়া নদীর তীরে নারী জাগরণের পথিকৃৎ নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়িতে দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে।

সিলেট : এ বছরও ঈদের ছুটিতে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ঢল নেমেছে পর্যটকের। অন্যান্য স্থানের চেয়ে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এবার পর্যটকের সবচেয়ে বেশি ঢল নেমেছে জাফলংয়ে। পিয়াইনে স্নাত হওয়া ছাড়াও তারা জাফলংয়ে ঘুরে দেখছেন ওপারের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনাধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, সমতল চা বাগান, খাসিয়াদের বৈচিত্র্যময় জীবনধারাসহ চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। ফেরার পথে পর্যটকরা ঢুঁ মারছেন জৈন্তাপুরের লালা খালে সবুজ পান্না জলের সারী নদীতে।

জাফলং ছাড়াও পর্যটকের ঢল নেমেছে জল-পাথর-পাহাড়ের মিতালির বিছনকান্দি, দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে খ্যাত দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল, মায়াবী সৌন্দর্যের মায়াবন, বিস্তীর্ণ ঝরনাধারার পাংথুমাই, ঐতিহাসিক মেগালিথিক পাথর ও ঐতিহ্যের স্মারক জৈন্তিয়া রাজবাড়ী, প্রকৃতির আশ্চর্যময় সৌন্দর্যের লীলাভূমি লোভাছড়ায়। শহরের বাইরের পর্যটন কেন্দ্র ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, শিশু পার্ক, দর্শনীয় স্থান ও চা বাগানগুলোতেও পর্যটকের ঢল নামে ঈদের দিন বিকাল থেকে। ঈদের ছুটি শেষ হয়ে গেলেও এখনো পর্যটকদের পদচারণ কমেনি সিলেটে।

শ্রীমঙ্গল : প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে দেশের অন্যতম পর্যটন শহর চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গল পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে। হাজার হাজার পর্যটকের আগমনে গত তিন দিন এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। পর্যটকরা ছুটে বেড়িয়েছেন এক স্পট থেকে অন্য স্পট। তাদের গাড়িবহরে শহরজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, টি রিসোর্ট, ইকো-কটেজ, বিটিআরআই রেস্ট হাউস, পিডিইউ রেস্ট হাউস, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ, লাউয়াছড়া বাংলোসহ অন্য রেস্ট হাউসগুলো ৩০ জুন পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং হয়ে আছে। বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গত তিন দিনে প্রায় ৫ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন। তাদের আগমনে ঠাঁই ছিল না রমেশের সাত কালারের চা কেবিনেও। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না ‘বধ্যভূমি ’৭১’-এ। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের প্রবেশপথে সাতগাঁও চা বাগানে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন চায়ের ভাস্কর্য, পাহাড়ি এলাকায় গড়ে ওঠা লেবু, আনারস, পান, রাবার ও কাঁঠালবাগান, আদিবাসী মণিপুরী, টিপরা ও খাসিয়া পল্লী, অত্যন্ত সুরক্ষিত ও নির্জন পরিবেশে পাহাড়ি টিলার ওপর নির্মিত টি রিসোর্ট, পাঁচ তারকা মানের গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের নজরকাড়া সৌন্দর্য পর্যটকদের বিমোহিত করে তোলে। সবুজ নিসর্গের চা বাগানগুলো ছিল পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। পর্যটকরা ঘুরে দেখেছেন এখানকার আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র ও সংস্কৃতি।

মেহেরপুর : মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগরে রয়েছে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী থেকে সব বয়সের মানুষের আনাগোনায় মুজিবনগর আম্রকানন ও কমপ্লেক্সে এখন পা ফেলার তিলমাত্র জায়গা থাকছে না। পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়াসহ ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও দেশের সব জায়গা থেকে পর্যটকের আগমন ঘটেছে ঐতিহাসিক মুজিবনগরে।

সর্বশেষ খবর