শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঈদ আনন্দ

ছুটির চতুর্থ দিনেও পর্যটন কেন্দ্রে ভিড়

প্রতিদিন ডেস্ক

ছুটির চতুর্থ দিনেও পর্যটন কেন্দ্রে ভিড়

কক্সবাজারসহ দেশের প্রধান প্রধান পর্যটন স্পটগুলো এখনো রয়েছে লোকেলোকারণ্য। ঈদের দিন থেকে এ অবস্থা চলছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ অনুযায়ী, সবগুলো পর্যটন কেন্দ্রেই রয়েছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

কক্সবাজার : ঈদ পরবর্তী চতুর্থ দিনেও লাখো পর্যটকে মুখর ছিল পর্যটন নগরী কক্সবাজার। ঈদের দিন থেকে টানা নয় দিনের ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতে ভিড় করেছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কে বহু পর্যটক ঘর থেকে বেরিয়েছেন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিরাজ করছে মহোৎসবের আমেজ। এই সঙ্গে অন্যান্য স্পটগুলোতেও আগের দিনের মতো প্রচণ্ড ভিড় ছিল। ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারে এখনো এক লাখেরও বেশি পর্যটক অবস্থান করছেন।

কক্সবাজার কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমদ জানান, সমিতির আওতাভুক্ত ১১৭টি কটেজের ৯৫ শতাংশতেই পর্যটকে ভরপুর রয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ : ঈদের ছুটিতে নারায়ণগঞ্জের  সোনারগাঁয়ে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় লেগেই রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আজ আরও দর্শনার্থীর ঢল নামবে। সরেজমিনে গতকাল দেখা গেছে, টানা ৪ দিন ধরে সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, বাংলার তাজমহল-পিরামিড ও পানামনগরীসহ সোনারগাঁয়ের প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিশেষ করে পর্যটকদের ঢল নামে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের নির্মিত বাংলাদেশ লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, সোনারগাঁয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল পেরাব এলাকায় বাংলার তাজমহল ও পিরামিডে। আগত দর্শনার্থীরা দেখেন মিসরের পিরামিড আদলে নির্মিত বাংলার পিরামিড, ফিল্ম তৈরির যন্ত্রপাতি, ৫টি শুটিং স্পট, ফ্লিম তৈরির স্টুডিওসহ নানা শিক্ষাভিত্তিক আয়োজন। রং-বেরঙের পোশাক পরিহিত অনেক দর্শনার্থী ফাউন্ডেশন চত্বরের লেকে প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে নৌকা দিয়ে বেড়ানোর মাধ্যমে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন। শিশু-কিশোররা নাগর-দোলায় দোল খেয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করে। দর্শনাথীদের উপস্থিতির কারণে ঈদের দিন থেকেই লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলার তাজমহল ও পিরামিড খোলা রাখা হয়। দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ছিল লোকশিল্প জাদুঘর প্রাঙ্গণ। আগতদের সুবিধার জন্য সরকারি ছুটি বাতিল করে জাদুঘর খোলা রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে দর্শনার্থীর আনন্দ বিনোদন দিতে চলছে বাউল সংগীতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। জাদুঘরের ভিতর কারুপল্লীতে জামদানি শাড়িসহ নানা ধরনের হস্তশিল্প সামগ্রী কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে বাংলার তাজমহল ও বাংলার পিরামিডে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীর ভিড় ছিল তাজমহল ও পিরামিডে। এখানে আসা দর্শনার্থীর চোখে মুখেছিল একটাই স্বপ্ন সেটা হলো, তাজমহল ও পিরামিড দেখা। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপ জানান, এ বছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ফাউন্ডেশন এলাকায় পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। ঈদে আনন্দের কমতি ছিল না। আগত দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে বাউল গানের আসরসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠান হাজারো দর্শক উপভোগ করছেন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সোনারগাঁও ঘুরলেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে ও অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তার ব্যক্তিগত সফরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ঘুরে গেছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে তিনি সোনারগাঁয়ে ঐতিহাসিক পানাম নগরীতে আসেন। নগরী পরিদর্শন করে তিনি বাংলাদেশে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে (সোনারগাঁ জাদুঘরে) যান। সেখানে জাদুঘর মূল চত্বরের পাশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য পরিদর্শন করেন। পরে তিনি জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারি ও পুরনো নকশার আদলে সংস্কার করা বড় সরদার বাড়ি ঘুরে দেখেন। তার তার সফর সঙ্গী ছিলেন স্বামী খন্দকার মাসরুর হোসাইন, ছেলে-মেয়ে ও দুজন বিদেশি অতিথি।

গাজীপুর : পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঈদের চতুর্থ দিন গতকালও গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে হাজার হাজার দর্শনার্থী ও পর্যটকদের ভিড় ছিল। এ পার্কে চার দিনে প্রায় ৬০ হাজার দর্শনার্থী সমাগম ঘটেছিল বলে কর্তৃপক্ষ বলছেন। ঈদের পরদিন এবং তার পরদিন দর্শনার্থীর সমাগম সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। ঈদের দিনও ১০/১২ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়। পার্কের সহকারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফরেস্ট রেঞ্জার) মোতালেব হোসেন বলেন, ঈদের পরদিন মঙ্গলবার এবং তার পরদিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা আগের দিনের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায়। পার্কে অধিকাংশ দর্শনার্থীদেরই ‘কোর সাফারি পার্ক’-এ ভিড় করতে দেখা গেছে। এই পার্কে বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, হাতি ইত্যাদি আলাদা আলাদা সীমানা প্রাচীরের ভিতর উন্মুক্তভাবে বিচরণ করছে। তিনি আরও জানান, ঈদ উপলক্ষে পার্কের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছিল। সাফারি কিংডমে ময়ূর, ধনেশ, ক্রাউন্ট ফিজেন্টসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের পাখির পাখিশালা, প্রজাপতি কর্ণার, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, মেরিন একুরিয়াম, ইমু গার্ডেন, ময়ূর/মেকাউ ওপেন ল্যান্ড, লেকজোন ও কুমির পার্ক দেখতে ভিড় জমান হাজার হাজার দর্শনার্থী। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠে দর্শনার্থীরা সুবিশাল সবুজ প্রকৃতি দেখতেও ভিড় জমান। এ ছাড়া গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, চড়ুইপাখি, শ্যামলী, গ্রিনটেক, ছুটি, খতিব খামার বাড়ি, নুহাশ পল্লী, নক্ষত্রবাড়ি, অঙ্গনা, নন্দনসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রেও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। দিনাজপুর : ঈদ পরবর্তী দিনাজপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে আমেজ কাটেনি। বিনোদনমোদীদের জন্য বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে দিনাজপুরের সিটিপার্ক, নয়নাভিরাম মায়াবী স্বপ্নময় ভুবন স্বপ্নপুরীসহ রামসাগর, বীরগঞ্জের সিংড়া ফরেস্টসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র। ঈদের দিন থেকেই এসব কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লেগে আছে। শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী নারী-পুরুষের আগমন চোখে পড়ার মতো। স্বপ্নপুরীতে আসা পর্যটক মুকুল বলেন, ‘এখানে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে। সব একেবারে মনের মতো। ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আছে ঘাড়গুঁজো বসে থাকা অবসন্ন কৃষকের ভাস্কর্য। সেখানে সারিবদ্ধ চেয়ার, টুল বসানো আছে। হংসরাজ সাম্পানে চড়ে স্বচ্ছ নীল পানির লেকে হারিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। সাম্পানে যেতে যেতে দেখা যায় কোথাও একাকী দাঁড়িয়ে আছে নারী, মাথা নিচু করে বসে আছে হতাশাগ্রস্ত যুবক অথবা ফুটে আছে বিশালকৃতি কচুপাতা।

এরপর রয়েছে কৃত্রিম পশু দুনিয়া। প্রবেশ পথে দুটি ড্রাগন সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরপর দু-এক পা ফেলতেই চমকে উঠতে হয়। সামনেই পথ জুড়ে হাঁ করা এক নর-করোটি। এই নর-করোটির মুখের ভিতর দিয়েই মূল পশু দুনিয়ার পৌঁছাতে হয়। এখানে রয়েছে কৃত্রিম পাহাড় ও ঝরনা। ঝরনার পানি গড়িয়ে একটি ছোট জলাশয়ে পড়ছে। লেকের পাশে রয়েছে অবসর যাপনের জন্য একাধিক মনোমুগ্ধকর ডাকবাংলো।’

সর্বশেষ খবর