শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আসন বিন্যাস ভোটার-জনসংখ্যার ভিত্তিতে

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ

গোলাম রাব্বানী

আসন বিন্যাস ভোটার-জনসংখ্যার ভিত্তিতে

আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য আইন-বিধি পর্যালোচনা শুরু করছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এবার জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যাকে প্রাধান্য দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কথা ভাবছে ইসি। আসন্ন সংলাপে রাজনৈতিক দলসহ অন্য স্টেকহোল্ডারদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজের রূপরেখাও তৈরি শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। আগস্ট থেকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

কমিশন বলছে, সময়ের পরিবর্তনে এবং জনমানুষের শহরমুখী প্রবণতার কারণে বড় বড় শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে। জনসংখ্যার আধিক্য অথবা ঘনত্ব বিবেচনা করা হলে শহুরে এলাকায় সংসদ সদস্যের সংখ্যা বাড়বে; পল্লী অঞ্চলে আসন সংখ্যা কমে যাবে। ফলে শহর এবং পল্লী অঞ্চলের সংসদীয় আসনের বৈষম্য সৃষ্টি হবে। এ জন্য বিগত সময় প্রায় ৫০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হলেও এবার বড় বড় শহরের আসন সংখ্যা সীমিত রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও উপজেলা ঠিক রেখে এবার সীমানা পরিবর্তনের কাজ করবে ইসি। ইতিমধ্যে বিএনপি ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে দলটির প্রাথমিক মতামতও তুলে ধরেছে। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে এবার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হতে পারে।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন— বর্তমানে সোয়া ১৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১০ কোটি ১৮ লাখেরও বেশি নাগিরক ভোটার। সেক্ষেত্রে প্রতি আসনে গড়ে ৫ লাখেরও বেশি জনসংখ্যা ও ৩ লাখ ৪০ হাজারের মতো ভোটার সংখ্যার কম-বেশিকে বিবেচনায় রেখে কাজ করতে হবে।

ইসির প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনায়ও বলা হয়েছে— সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শুধু জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি না করে জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় নেওয়া  প্রয়োজন। কারণ ভোটার তালিকা প্রতিবছর হালনাগাদ হয়। জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা উভয়কে প্রাধান্য দিয়ে বড় বড় শহরের আসন সংখ্যা সীমিত করে দিয়ে আয়তন, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও উপজেলা ঠিক রেখে এবার সীমানা নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ জন্য জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজনৈতিক দল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। এর পরে আগস্ট থেকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অক্টোবর-নভেম্বরে সীমানার খসড়া তৈরি হবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে খসড়া প্রকাশ, ফেব্রুয়ারিতে দাবি-আপত্তি গ্রহণ এবং শুনানি শেষ করবে ইসি। এর পরে এপ্রিলের মধ্যে সীমানার গেজেট প্রকাশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০০১ সালের আদমশুমারির জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচন প্রাক্কালে সংসদীয় সীমানার ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১১ সালের আদমশুমারির ওপর ভিত্তি করে তেমন পরিবর্তন আনা হয়নি। যাতে আগের সীমানা বেশির ভাগ বহাল রাখা হয়।

এ বিষয়ে ইসি অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে। আমরা এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করব শিগগিরই। সে ক্ষেত্রে জনসংখ্যা ও ভোটার অনুপাতকেও প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান সীমানা পুনর্নির্ধারণ অধ্যাদেশে প্রশাসনিক সুবিধা এবং ভৌগোলিক এলাকা যতখানি সম্ভব অখণ্ড রাখার কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী সংশোধনীতে জনসংখ্যার কথা বলা হলেও ভোটারদের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২০১১ সালের আদমশুমারির প্রকাশিত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরির মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করতে চাচ্ছে।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় অর্ধশত সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য আগস্ট থেকে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হচ্ছে। আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে এ কাজ শেষ করবে ইসি। এর মধ্যে আগস্টে আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। সেপ্টেম্বরে সীমানা নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা এবং অক্টোবর-নভেম্বরে সীমানার খসড়া তৈরি হবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে খসড়া প্রকাশ, ফেব্রুয়ারিতে দাবি-আপত্তি গ্রহণ এবং শুনানি শেষ করবে ইসি। এর পরে এপ্রিলের মধ্যে সীমানার গেজেট প্রকাশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন— এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৫০টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করেছে। ওই সময় ১৭ শতাংশ আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশন ৮৭টি আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছিল। পরে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৫০টির আসন সীমানা নবম সংসদের মতোই রাখা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর