শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বেওয়ারিশ জঙ্গিদের কবরে ওয়ারিশদের ভিড়

আলী আজম

বেওয়ারিশ জঙ্গিদের কবরে ওয়ারিশদের ভিড়

হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ বেকারির এক কর্মীর লাশ দাফন করা হয়েছিল বেওয়ারিশ হিসেবে। বেওয়ারিশ কবরগুলো চিহ্নিত করে রাখতে দেওয়া হয়েছিল সিরিয়াল নম্বর। কিন্তু বেওয়ারিশ লাশের এই কবরের সামনে ওয়ারিশদের আনাগোনা ছিল বছরজুড়েই। তারা সিরিয়াল নম্বর দেখে স্বজনদের কবর শনাক্তের পর দোয়া করতেন, কাঁদতেন। তবে এসবই করতেন তারা গোপনে। কবর দেখেশুনে রাখতে বখশিশ দিতেন কবরস্থানের লোকজনকে। জুরাইন কবরস্থানের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জানা গেছে, হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত জঙ্গিদের লাশ আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পর তাদের  পরিচয় হয় শুধু সিরিয়াল নম্বর। নামফলকে যা লিপিবদ্ধ করে টাঙানো হয়েছে। কেবল ওই বেকারির কর্মী সাইফুল  ইসলাম চকিদারের নামটি লেখা রয়েছে একটি নামফলকে। যদিও তাকেও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। ওই জঙ্গিদের কবরের দায়িত্বে থাকা জুরাইন কবরস্থানের ক্লিনার ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. হারুন মিয়া জানান, হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত জঙ্গিদের কবর তার দায়িত্বে। তিনিই এর দেখভাল করেন। জঙ্গিদের বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে কবর দেওয়ার পর নিহতদের স্বজনরা আসতে শুরু করেন। প্রথম দিকে তারা জঙ্গিদের কবর পরিষ্কার করার জন্য বখশিশ দিতেন। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর জঙ্গিদের কবর পরিষ্কার করতে তারা নিষেধ করেন। কবর পরিষ্কার না করার জন্য তারা বখশিশ দেন। এরপর থেকে তা পরিষ্কার না করায় প্রাকৃতিক গাছপালায় ভরে গেছে। জঙ্গিদের স্বজনরা কারণ হিসেবে বলেছেন, কবরের ওপর গাছপালা থাকলে ভালো। কবর পরিষ্কার না করলে গাছপালার আড়ালে তাদের সন্তানরা শান্তিতে থাকবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হলি আর্টিজানে নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন এবং অন্য ঘটনায় নিহত আরও তিন জঙ্গির লাশ একই সারিতে দাফন করা হয়েছে। প্রথম কবরটি হলি আর্টিজানের কর্মী সাইফুলের। সেখানে একটি সুপারি গাছ রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য জঙ্গিদের লাশ। প্রতিটি কবর বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। সবুজ রংয়ের এ বেড়ায় টাঙানো রয়েছে নিহতদের সিরিয়াল নম্বর। প্রতিটি কবর লতাপাতায় ভরে গেছে। হলি আর্টিজানে হামলার পর পাল্টা কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। তারা হলো— নিবরাস ইসলাম, মীর সামি মোবাশ্বের, রোহান ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল, শফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েল এবং রেস্তোরাঁর কর্মী সাইফুল ইসলাম চকিদার। জঙ্গিরা মারা যাওয়ার পর তাদের লাশ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) মর্গে পাঠান হয়। ময়নাতদন্ত হয়। দিন যায়, মাস যায় কিন্তু তাদের লাশ নিতে কেউ আসেন না। নাম-পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তাদের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দেওয়া হয়। ২২ সেপ্টেম্বর পরিবারের পক্ষ থেকে ‘লাশ নিতে না চাওয়ায়’ জুরাইন কবরস্থানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ দাফন করা হয়। জঙ্গিদের দাপটে গোটা দেশ থাকে আতঙ্কে। সেই দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের শেষ পরিণতি হয় বেওয়ারিশ লাশ। স্বজনরা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে জঙ্গিদের লাশ সে সময় গ্রহণ না করলেও জঙ্গিদের কবর জুরাইন কবরস্থানে তারা নিয়মিত আসছেন। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী জঙ্গিরা হামলা চালায়। প্রতিরোধ করতে গিয়ে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় ডিবির এসি রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন খান নিহত হন। রাতে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্তোরাঁর এক কর্মী নিহত হন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর