রবিবার, ২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাহাজ কনটেইনার জটে স্থবির চট্টগ্রাম বন্দর

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

জাহাজ কনটেইনার জটে স্থবির চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরে জট লেগেছে কনটেইনারের — বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঈদের ছুটি, মাত্রাতিরিক্ত আমদানি এবং লাগাতার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জাহাজ ও কনটেইনার জটে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতির পাইপলাইন খ্যাত এ বন্দর। জানা গেছে, বর্তমানে বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরে অন্তত ১০০ জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মোহাম্মদ জাফর আলম জানান, ঈদের ছুটি এবং টানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জাহাজ ও কনটেইনারের কিছুটা জট তৈরি হয়েছে। এ সমস্যা থেকে বের হতে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) পরিচালক (বন্দর ও কাস্টমস) খায়রুল আলম সবুজ বলেন, ‘ঈদের আগেই বন্দরে কনটেইনার জট শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটিতে তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এখন পণ্য ডেলিভারিও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় খুবই নগণ্য পর্যায়ে চলে এসেছে। জটের কারণে বন্দরে নতুন কোনো কনটেইনার খালাসের জায়গা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ জটের কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে এ জটের প্রভাব পড়বে।’ এদিকে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, লাগাতার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঈদের ছুটি এবং বাজেটের আগে মাত্রাতিরিক্ত আমদানির ফলে তৈরি হয়েছে এ জাহাজ ও কনটেইনার জট। এ জটে পড়ে মাশুল দিতে হচ্ছে সব পক্ষকেই। বন্দরে অতিরিক্ত অবস্থানের কারণে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারীদের খরচ বাড়ছে। কনটেইনারে নির্ধারিত সময়ের বেশি পণ্য রাখার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমদানিকারকদের জরিমানা দিতে হবে। আমদানি করা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বিলম্বে পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, প্রতি বছর ঈদের পাশাপাশি বাজেট সামনে রেখে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ঈদ ও বাজেট ভিন্ন সময় হওয়ায় তা বন্দরের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলে না। কিন্তু এ বছর একই সময়ের মধ্যে বাজেট ও ঈদ পড়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড় মোরার কারণে আড়াই দিন বন্ধ ছিল বন্দরের কার্যক্রম। মোরার বিপর্যয় কাটিয়ে না উঠতেই দেখা দেয় নিম্নচাপ ও প্রবল বর্ষণ। সব মিলিয়ে বন্দরের পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। ৩৬ হাজার ৩৫৭টি ধারণক্ষমতার এ বন্দরে বর্তমানে বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার রয়েছে সাড়ে ৩৬ হাজার। যদিও নিয়ম অনুযায়ী যন্ত্রপাতি চলাচলের জন্য ধারণক্ষমতার অন্তত ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়। কনটেইনার জটের পাশাপাশি বন্দরে ছুটির কারণে দেখা দিয়েছে জাহাজজটও। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান জেটি এবং বহির্নোঙরে ৬০ থেকে ৭০টি জাহাজের অবস্থান থাকলেও বর্তমানে জাহাজ রয়েছে প্রায় ১০০। বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বর্তমানে প্রতিটি জাহাজ বহির্নোঙরে কমপক্ষে ছয় দিন অপেক্ষার পর জেটিতে নোঙর করার অনুমতি পাচ্ছে। জেটিতে পণ্য খালাসে সময় লাগছে চার থেকে পাঁচ দিন। কোনো জাহাজ যদি অতিরিক্ত এক দিন বন্দরে অপেক্ষা করে তাহলে জরিমানা গুনতে হয়। এ খরচ পরে আমদানিকারকদের কাছ থেকে তুলে নেবে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ খবর