রবিবার, ২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঢাবির ৯৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

অপরূপ সাজ আর আনন্দ উচ্ছ্বাস

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

অপরূপ সাজ আর আনন্দ উচ্ছ্বাস

ক্যাম্পাসজুড়ে মনোরম সাজসজ্জা আর মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় রংবেরঙের তোরণ। রঙিন বাতিতে বিয়ের সাজে সাজানো হয় ভবনগুলো। বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের করিডর বেলুন, ফেস্টুন আর আলপনার ছোঁয়ায় ধারণ করে বর্ণিল রূপ।

সূর্যোদয়ের পর এমনই এক নতুন ক্যাম্পাসকে আবিষ্কার করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) পরিবারের সদস্যরা। নতুন ক্যাম্পাসকে তো আবিষ্কার করতেই হবে! কারণ এটা তো সাধারণ কোনো দিন নয়, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন। অপরূপ সাজে সজ্জিত ক্যাম্পাসে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে গতকাল পালিত হয় ঢাবির ৯৭তম জন্মদিন। ১৯২১ সালের ১ জুলাই পূর্ববঙ্গের মানুষকে উচ্চশিক্ষার অগ্রযাত্রায় শামিল করতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের সর্বপ্রাচীন এ বিশ্ববিদ্যালয়। ৯৭ বছরে পদার্পণের এ সময়ে যেভাবে ক্যাম্পাসে নবীন প্রবীণের মিলনমেলা ঘটেছে সেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও গৌরব ধরে রাখার অঙ্গীকারও ছিল সবার মাঝে। ‘উদ্ভাবন ও উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল সকালে ঢাবির প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন মলে শুরু হয় দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। জাতীয় সংগীত আর পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সূচনা হয় এর। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোসংবলিত বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এবং কেক কেটে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ‘উদ্ভাবন ও উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আয়োজিত এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী বক্তৃতায় উপাচার্য সত্যনিষ্ঠ জাতি গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে বলে আশ্বাস ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টাদের আজীবন স্বপ্ন ছিল একটি সত্যনিষ্ঠ জাতি গঠন। যেখানে কোনো বৈষম্য-ভেদাভেদ থাকবে না। আর তা বাস্তবায়ন করতে নেতৃত্ব দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গঠন করা সময়ের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গঠন বর্তমান সময়ের একটি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে হবে। উপাচার্য বলেন, শুরু থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয় তার ছাত্রছাত্রীদের সর্বাঙ্গীণ শিক্ষা-জ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আর সেই শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ে জাতির প্রয়োজনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ভূমিকা পালন করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ সময় তিনি ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও অন্যান্য আন্দোলনে জীবন দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এ ছাড়া মানব সংকট সৃষ্টিকারী জঙ্গিবাদের কারণে গুলশানের হলি আর্টিজানসহ অন্যান্য স্থানে নিহতদের প্রতিও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মলচত্বর থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)-সংলগ্ন সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য মোড় ঘুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুনসহ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এর আগে সকাল ৯টা থেকেই আবাসিক হলগুলোর প্রাধ্যক্ষদের নেতৃত্বে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মলচত্বরে হাজির হতে থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ গৌরবের দিনের সাক্ষী হতে অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রাক্তনরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদের নেতৃত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে দুর্লভ পাণ্ডুলিপি প্রদর্শনী এবং কার্জন হলে বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও গবেষণা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল দিনব্যাপী নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ উপলক্ষে হল, বিভাগ ও অফিসসমূহ গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা ছিল।

সর্বশেষ খবর