রবিবার, ২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
চিড়িয়াখানার হালচাল ১

মৃত্যুঝুঁকিতে ৪৮ প্রাণী

মোস্তফা কাজল

মৃত্যুঝুঁকিতে ৪৮ প্রাণী

জাতীয় চিড়িয়াখানায় ৪৮ পশু ও পাখি মৃত্যুঝুঁকিতে। এসব পশু-পাখির জীবন প্রদীপ যে কোনো সময় নিভে যেতে পারে। দিন দিন ঝুঁকিতে থাকা এসব প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১১ সালে এ তালিকায় প্রাণীর সংখ্যা ছিল ২২। ২০১২ সালে ২৫-এ উন্নীত হয়। এরপর ২০১৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮-এ। ২০১৪ সালে ৩০-এ গিয়ে ঠেকে। ২০১৫ সালে ৩৫ এবং ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ৪০-এ। এরপর এক বছরের ব্যবধানে আরও ৮ পশু পাখির নাম যোগ হয়েছে। এসব প্রাণী জটিল রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত। মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা এসব প্রাণীর কারণে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের বাড়তি খরচ ও ঝামেলা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবেশি দেশ ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও সিঙ্গাপুরে এমন ধরনের প্রাণীকে হত্যা বা পুনরায় বনে ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও আমাদের দেশে তেমন কোনো নিয়ম নেই। এছাড়া মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা এসব প্রাণীর মৃত্যু হলে নানা ধরনের বিভ্রান্ত তৈরি হয়। দর্শনার্থীদের মধ্যে এর প্রভাব দেখা যায়। 

জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা ৪৮ প্রাণীর জন্য আমরা আলাদাভাবে প্রথমবারের মতো একটি বৃদ্ধনিবাস বা ওল্ড হোম নির্মাণ করেছি। সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রাণীদের রাখা হয়েছে। এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগার একটি। এ বাঘের নাম রাজা। এক সময় রাজার গর্জনে কেঁপে উঠত পুরো চিড়িয়াখানা। বয়সের কারণে এখন রাজার তেমন কোনো হাঁকডাক নেই। এরপর রয়েছে ভারতীয় সিংহ তিনটি। এ তিন সিংহীর নাম-বাসমতি, মণীষা ও বিউটি। এরপর রয়েছে গণ্ডার, শিম্পাঞ্জি, এশিয়ান হাতি একটি, এশিয়ান জলহস্তি দুইটি। এর মধ্যে একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী প্রজাতির। তিনটি সোনালি বুক বানর, দুটি হনুমান, দুটি ভল্লুক, দুটি ডিংগো কুকুর, দুটি হায়েনা, চিত্রা হায়েনা, বাগডাস, উটপাখি, বক, কেশয়ারী ও ভোদর অন্যতম। আরও রয়েছে মদন টাক, ইমু, সাদা প্যালিকেন, বেঙ্গল শকুন।  এই পশুপাখিগুলো বিভিন্ন সময়ে টেন্ডার ও উপহারের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিংহের জন্ম ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে। আবদ্ধ অবস্থায় এই প্রাণী ১৫ থেকে ২০ বছর বাঁচতে পারে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এ দুই প্রাণীর বয়স ২২ বছর অতিবাহিত হয়েছে। বয়সের কারণে তাদের দাঁত পড়ে গেছে। চোখে ভালো দেখতে পায় না। গরুর মাংস কিমা করে খেতে দেওয়া হয়। এছাড়া নেপালি গণ্ডারের অবস্থাও ভালো নয়। ভালোভাবে খেতে পারে না। জটিল রোগে আক্রান্ত এই প্রাণীর শরীর থেকে এক ধরনের পুজ অনবরত বের হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিয়েও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রতি মাসে ওষুধ ও চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। আগের মতো প্রাণীটি চলাফেরা করতে পারে না। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে এ প্রাণীটি নেপাল সরকার উপহার হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে প্রদান করে। আবদ্ধ অবস্থায় এই প্রাণী ১৫ থেকে ১৬ বছর বেঁচে থাকতে পারে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রাণীটির বয়স ১৯ বছর অতিবাহিত হয়েছে। দ্রুত গতির হায়েনা চিড়িয়াখানার খাঁচার ভিতরে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। খাবার সময় হলে চলাফেরা করে। বাকি সময় শুয়ে-বসে সময় কাটায়। আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া দুই হায়েনার বয়স গত জানুয়ারি মাসে ২২ বছর অতিক্রম করেছে। অথচ আবদ্ধ অবস্থায় এই প্রাণী ১৮ থেকে ২০ বছর বেঁচে থাকে।  ভাল্লুক, এশিয়ান হাতি, হনুমান, সোনালি বুক বানর, লজ্জাবতী বানর, মদন টাক, সাদা পেলিকান, সারস ক্রেন বাগডাস, শিম্পাঞ্জি, ডিংগো কুকুর, বাগডাস, উটপাখি, বক, কেশয়ারী ও ভোদরের অবস্থাও এখন নিবু নিবু করছে। যেকোনো সময় এসব প্রাণীর জীবন প্রদীপ নিভে যেতে পারে।  চিড়িয়াখানার পুষ্টি কর্মকর্তা আবু সাঈদ কামাল বাচ্চু বলেন, মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা এসব প্রাণীর জন্য আমাদের প্রতি মাসে অতিরিক্ত চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। পাশাপাশি নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য কর্মচারীও নিয়োগ দিতে হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর