মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
রিজার্ভ চুরি

অর্থ পাচারের তথ্য পেতে চুক্তি হচ্ছে শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

অর্থ পাচারের তথ্য পেতে চুক্তি হচ্ছে শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে

রিজার্ভ চুরিসহ অর্থ পাচার-সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাংকিং তথ্য আদান-প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাংকের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তি হতে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরকালে এই এমওইউ সই হতে পারে। চলতি মাসেই দেশটির রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের এক চিঠিতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে এবং ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় পাচার করা হয়। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, শ্রীলঙ্কার ২০ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার পর দেশটির সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে এ ধরনের একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ শ্রীলঙ্কায় যেটুকু গিয়েছিল তা আমরা ফেরত পেয়েছি। তাই এই চুক্তিটি সরাসরি রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমনটি বলা যাবে না। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের (রিজার্ভ চুরি) ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সহায়তা করতে পারে এই চুক্তি।’ তিনি জানান, প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদানের ব্যাপারে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করাই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য। দুটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে এ ধরনের তথ্য আদান-প্রদান প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে রিজার্ভ চুরি ও অর্থ পাচারের মতো ঘটনা প্রতিরোধে সহায়তা করবে বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মুখপাত্র। চুক্তিতে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেন (ক্রস-বর্ডার ব্যাংকিং) সংক্রান্ত তথ্য লেনদেনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চুক্তির খসড়ায় তথ্য আদান-প্রদানে অন্তত ৮ থেকে ১০টি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার একটিতে বলা হয়েছে, সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলায় তথ্য ভাগাভাগির কার্যক্রম চলমান থাকবে। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ বিচার বিভাগের অধীনে লাইসেন্সকৃত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক লেনদেন স্থাপনের কাজগুলো যাতে বিশুদ্ধভাবে পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করবে। সম্প্রতি কাতারের সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গেও এ ধরনের একটি চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং তথ্য আদান-প্রদানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের। তবে এই চুক্তিটি সেই অর্থে মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি না হয়ে দুটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে তথ্য লেনদেনের জন্য সমঝোতা চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক রূপ রতন পাইন বলেন, ‘এই চুক্তির ফলে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা, অগ্রগতির তথ্য শেয়ার করতে পারব। তারা (শ্রীলঙ্কা) যেসব ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে আমাদের চেয়ে সেটি আমরা গ্রহণ করব। একইভাবে আমরা যেসব খাতে এগিয়ে গেছি সে ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা তারা নিতে পারবে।’

 

সর্বশেষ খবর