মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
চিড়িয়াখানার হালচাল (৩)

বেহাল অবস্থা চার কারণে

মোস্তফা কাজল

বেহাল অবস্থা চার কারণে

ময়লা আবর্জনায় ভরপুর কুমিরের চৌবাচ্চা —রোহেত রাজীব

জাতীয় চিড়িয়াখানা বেহাল অবস্থায় পড়েছে চার কারণে। এর মধ্যে রয়েছে প্রবেশ সড়কের বিভিন্ন অংশে বিশালকায় খানাখন্দ থাকা, প্রাণীশূন্য খাঁচা থাকা, সংশ্লিষ্টদের জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকা এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এসব কারণে দর্শনার্থীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন, সুনাম হারাচ্ছে চিড়িয়াখানা।

সরেজমিন চিড়িয়াখানা ঘুরতে গিয়ে গতকাল দেখা গেছে, বানরের খাঁচায় ছোট জলাধারে সাঁতার কাটছে কয়েকটি বানর। দর্শকের দেখা পাওয়ামাত্র এরা পানি থেকে উঠে গা ঝাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে। হাত বাড়ায় খাঁচার ফাঁক দিয়ে। খাবার চায়। কিন্তু এদিন সে রকম দর্শক ছিল না। আরেকটু ভিতরে যেতেই দেখা যায়, লোহার খাঁচায় বাঘ আর সিংহের অস্থির পায়চারি। খাবার পড়ে আছে, কিন্তু খাচ্ছে না। খানিক পরপর হালুম-হালুম গর্জন করছে। এদের সমস্যা কী, তা দেখার কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর এই সময় চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন ৫-৬ হাজার দর্শক থাকে। এখন হাজার তিনেক দর্শকও মিলছে না। ফটকের সামনে হাঁকডাকে ভরা হকারদের চিরচেনা সেই দৃশ্যও থাকছে না বললেই চলে। ভিতরে থাকছে না দর্শকের হল্লা। বনভোজনের দুটি স্থান (পিকনিক স্পট) খালি পড়ে থাকছে।

দুপুরের দিকে বাঘের খাঁচায় কোনো দর্শকই পাওয়া গেল না। দেখা যায়, যে পরিমাণ গরুর মাংস দেওয়া হয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল। কয়েক মিনিট পর স্ত্রী-পুত্র নিয়ে খোরশেদ আলম নামের এক দর্শক এলেন সেখানে। বললেন, ‘ঢুকতেই খানাখন্দে ভরা সড়কের কারণে কোমর ব্যথা করছে। ভেবেছিলাম ভিতরের পরিবেশ ভালো হবে। এখন দেখছি ময়লায় ভরপুর।’ মিথিলা জান্নাত নামে উত্তরা থেকে আগত তরুণী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানার ভিতরের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় উত্কট গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।’ চিড়িয়াখানা ঘুরে আরও দেখা গেছে, ১০-১১টি খাঁচাই শূন্য। এসব খাঁচায় কোনো প্রাণী বা পাখি নেই। তবে ‘অবস্থার উন্নতি হয়েছে’ দাবি করে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন থেকে মালঞ্চ নামের একটি রেস্টুরেন্ট খোলা হয়েছে। এ রেস্টুরেন্ট থেকে অনেকে উন্নতমানের খাবার ও ফাস্টফুড সহনীয় দামে খেতে পারছেন। এ রেস্টুরেন্ট থেকে ১৫০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি বিক্রি করা হচ্ছে।’ সরেজমিন দেখা গেছে, অনেকে লাইন ধরে খাবার কিনছেন। এ বিষয়ে বাইরের শসা বিক্রেতা সুমন হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘আইজ ১০টা শসা বিক্রি করছি। এ টাকায় সংসার চলে না। সবাই এখন চিড়িয়াখানার ভিতর থেকে পছন্দের খাবার কিনতে পারে। তাই বাইরের ব্যবসা একেবারে মন্দা যাচ্ছে।’ আবদুল কুদ্দুস নামে চিড়িয়াখানা-মতিঝিল রুটের মিনিবাস চালক বলেন, ‘এ রুটের সনি সিনেমা ভবন থেকে চিড়িয়াখানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারের বিভিন্ন অংশে রয়েছে খানাখন্দ। সবচেয়ে বেশি খারাপ চিড়িয়াখানায় প্রবেশ সড়কের। মহানগরীর বিভিন্ন অংশ থেকে আগত যানবাহনগুলো খানাখন্দে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে।’ দুপুর ১টায় জিরাফের বেষ্টনীর সামনে গিয়ে দেখা যায় কিছু অংশ ভাঙা। জলহস্তী বেষ্টনীর কাছে গিয়ে দেখা গেছে এর কিছু অংশ নড়বড়ে এবং মরিচা ধরে ভেঙে গেছে। একই অবস্থা দেখা গেছে ময়ূরের খাঁচার সামনে। সাভার থেকে আগত আফরোজা আক্তার নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘ভাঙা বেষ্টনী দিয়ে হিংস্র প্রাণীগুলো বেরিয়ে এলে কী হতে পারে, তাই ভেবে আমি শঙ্কিত।’

এ ছাড়া চিড়িয়াখানার লেকের পাশে ‘উৎসব’ ও ‘নিঝুম’ নামে দুটি পিকনিক স্পট রয়েছে। উৎসবের এক দিনের ভাড়া ১০ হাজার আর নিঝুমের ৬ হাজার ৫০০ টাকা। বছরের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সময়ই এ দুই স্থান ভাড়া হয় না বলে জানা গেছে। জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত বৃহৎ প্রাণী শাখায় ২৯৮, মাংসাশী ৪০, ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ১৯৯, ছোট প্রাণী ৫৩৭, পাখি ১ হাজার ১৬৪, সরীসৃপ ৭৩, অ্যাকোরিয়াম শাখায় ৯১৯টি প্রাণী রয়েছে। সব মিলিয়ে আছে ২ হাজার ৬৯৩টি প্রাণী। জাতীয় চিড়িয়াখানার অনিয়ম ও বেহালের বিষয়ে জানতে চাইলে কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আপাতত বিভিন্ন পদে ২৯ জনবলের সংকট রয়েছে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। প্রবেশপথের সড়কের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর