মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় করুণাময় গোস্বামীর বিদায়

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

বাংলা একাডেমি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নারায়ণগঞ্জের তোলারাম  কলেজ, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও নারায়ণগঞ্জের শহীদ মিনারে সুহৃদ, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে নিজ জেলা নারায়ণগঞ্জের গাবতলী শ্মশানে ড. করুণাময় গোস্বামীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হলো। গতকাল বৃষ্টিস্নাত দিনকে উপেক্ষা করে এই শিক্ষাবিদ ও সংগীত গবেষকের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।

এর আগে সকালে তার মরদেহ শমরিতা হাসপাতালের হিমাগার থেকে বাংলা একাডেমিতে নেওয়া হয়। বাংলা একাডেমিতে করুণাময় গোস্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, একাডেমির সচিব আনোয়ার হোসেনসহ বাংলা একাডেমির অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শ্রদ্ধা জ্ঞাপনকালে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা সংগীতের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন ড. করুণাময় গোস্বামী। সংগীতের ইতিহাস ও এর ভাবসৌন্দর্য বিশ্লেষণে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখে গেছেন। তার গবেষণা কর্মের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মের মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন। দেশভাগ নিয়ে সম্প্রতি তার প্রকাশিত দুটি উপন্যাস ‘ভারতভাগের অশ্রুকণা’ ও ‘লাহোরের রহিম খের’ খুব তাত্পর্যপূর্ণ। এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ড. গোস্বামীর ভক্ত ও সুহৃদরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে ছুটে আসেন তার সুহৃদরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্বে আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইমেরিটাস প্রফেসর ভাষা-সংগ্রামী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, আবুল হাসনাত, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান, নজরুল ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবদুর রাজ্জাক ভুইয়া, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ প্রমুখ। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমি, ছায়ানট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, সর্বজনীন পূজা কমিটির মহানগর শাখা, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, মহিলা পরিষদ, উদীচী, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, ভিন্ন ধারা, বিএসবি ক্যামব্রিয়ান, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, বাংলাদেশ বেতার নিজস্ব শিল্পী সংস্থা, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, গুরুদয়াল কলেজ কিশোরগঞ্জ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা প্রভৃতি। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, উপমহাদেশে সংগীত গবেষণা ড. গোস্বামীর হাতে ঋদ্ধ হয়েছে। তিনি শিক্ষাবিদ ও গবেষক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। নজরুল ও রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে আজীবন গবেষণা করেছেন। তবে তার সবচেয়ে বড় অবদান সংগীতকোষ। এটা উপমহাদেশে সংগীত নিয়ে বড় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তার জ্ঞান ও মনীষা আমাদের আলোকিত করে, গর্বিত করে। সংগীতকোষ ড. করুণাময় গোস্বামীর অনন্য এক গবেষণাকর্ম। উপমহাদেশের সংগীত গবেষণায় এই গ্রন্থ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, গবেষণা ও শিক্ষায় অবদানের মধ্য দিয়ে ড. করুণাময় গোস্বামী নিজেকে জ্ঞানতাপস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অন্তর্মুখী এই মানুষটি সাহিত্য ও সংগীতে মৌলিক গবেষণায় যে কাজ করে গেছেন তা খুব কম গবেষকই করতে পেরেছেন। আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কিছু কিছু মানুষ থাকেন যাদের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। যে বয়সেই মৃত্যু হোক না কেন তা অকাল মৃত্যু বলে মনে হয়।  ড. করুণাময় গোস্বামী তেমন একজন ব্যক্তিত্ব। তার কাজ আমাদের পথ দেখাবে।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন করুণাময় গোস্বামীর স্ত্রী শ্রিপা দেবী, ছেলে সায়ন্তন গোস্বামী ও মেয়ে তিথি গোস্বামী। এসময় তার সন্তান তিথি ও সায়ন্তন সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বাবার আত্মজীবনী প্রকাশের ইচ্ছা ছিল। যা আলোর মুখ দেখেনি। আমরা সেটি প্রকাশের চেষ্টা করব।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ড. গোস্বামীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে। সেখানে শিক্ষক-ছাত্রসহ আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও পরে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয় তার মরদেহ। এসময় তার মরদেহে নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এরপর নারায়ণগঞ্জ সদরের গাবতলী শ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

সর্বশেষ খবর