মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পেরেক ফুটিয়ে কিশোর নির্যাতন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে পারভেজ হোসেন (১৪) নামের এক দরিদ্র কিশোর শ্রমিককে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের পর ১১ দিন ধরে সে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পাশের গ্রামের একটি মেয়ের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলার অভিযোগে তার শরীরে ও পুরুষাঙ্গে পেরেক ফুটিয়ে, পেটের ওপর উঠে পাড়িয়ে ও মাথায় ইট দিয়ে থেঁতলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার কিশোর পারভেজ মাগুরা জেলার শালিকা উপজেলার সিমাখালীর পিয়ারপুর গ্রামের শিমুল হোসেনের ছেলে। পারভেজ জন্মের পর থেকে তার নানা কালীগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের বাড়িতে থাকে। সে এক বছর হলো রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে আসছিল। এ ঘটনার পর নির্যাতিত পারভেজের মা পারভীনা বেগম কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিলে ১০ দিন পর শুক্রবার রাতে পুলিশ তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। মামলার বাদী পারভীন বেগম জানান, চাচাতো ভাই নাজমুলের সঙ্গে তার ছেলে পারভেজ ২২ জুন বিকাল ৫টার দিকে পার্শ্ববর্তী দাসবায়সা গ্রামের আজিজুলের মেয়ের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। এ সময় মেয়ের বাবা আজিজুল ও তার লোকজন এসে পারভেজকে মারধর করে ধরে নিয়ে যায়। তখন পারভেজের সঙ্গে থাকা তার চাচাতো ভাই নাজমুল পালিয়ে এসে বাড়িতে খবর দেয়। তবে পরিবারের লোকজন দাসবায়সা গ্রামে গিয়ে পারভেজকে খুঁজে পায়নি। তিনি জানান, ওই দিন সারা রাত আজিজুল ও তার লোকজন পারভেজের ওপর নির্যাতন চালায়। পরদিন ২৩ জুন বেলা ১২টার সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাগর বিশ্বাস ফোন দিয়ে জানান, পারভেজকে পাওয়া গেছে। পরে গিয়ে পারভেজকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার পুরুষাঙ্গে পেরেক ফোটানোর চিহ্ন ছিল। এ ছাড়া মারধরের কারণে বেরিয়ে আসা মলে মাখামাখি ছিল পারভেজের শরীর। পারভেজের মায়ের অভিযোগ, এ সময় কোলাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে পারভেজকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর সেখান থেকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হলে পারভেজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢামেকে পারভেজের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। এদিকে কোলাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান পারভেজের ওপর হামলার কথা অস্বীকার করেছেন। সে রকম কিছুই ঘটেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ছেলেটিকে হালকা চড়-থাপ্পড় মেরে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে ঘটনাটি মীমাংসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।’ তবে স্থানীয় কোলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জাফর হোসেন বলেন, ‘নির্যাতনের মাত্রা অনেক বেশি ছিল। তবে কারা কীভাবে নির্যাতন করেছে তা আমি বলতে পারব না। তার চিকিৎসার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ১২ হাজার টাকা এবং গ্রাম থেকে লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছি।’ কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক ও কষ্টদায়ক।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর