বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

১০৬ নম্বরে দুর্নীতির তাত্ক্ষণিক অভিযোগ

দুদকে চালু হচ্ছে হটলাইন

মোস্তফা কাজল

অবশেষে বদলে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদকের অভিযোগ দায়েরের প্রক্রিয়া। আগামী ২৬ জুলাই চালু হচ্ছে ১০৬ নম্বরের ৩ ডিজিটের হটলাইন সেবা। যখনই দুর্নীতির ঘটনা, তখনই অভিযোগ— এমন সুবিধা নিয়ে কমিশনে চালু হচ্ছে কল-সেন্টার বা হটলাইন। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে শেষ হয়েছে কল-সেন্টার স্থাপনের কাজ। দুদকে হটলাইন চালু হলে জনগণ অবশ্যই উপকৃত হবে। নতুন হটলাইনে চাইলেই দুর্নীতির শিকার যে কেউ মোবাইলে বা ফোনে অভিযোগ দিতে পারবেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে নেওয়া হয়েছে ৩ ডিজিটের হটলাইন নম্বর। বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে অভিযোগকারী ওই নম্বরে যে কোনো অপারেটর থেকে সার্ভিস চার্জ ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট অপরাধের সরাসরি অভিযোগ করতে পারবেন। নিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনি পরামর্শ। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই কল-সেন্টার স্থাপনের কাজ গতকাল শেষ হয়েছে। ১৩ সদস্যের জনবল নিয়ে কল-সেন্টারের যাত্রা হবে। সার্বক্ষণিক কল রিসিভ করতে সহকারী পরিচালক ও উপসহকারী পরিচালক পদমর্যাদার পাঁচজন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

জানতে চাইলে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কল-সেন্টার চালু হলে জনগণ দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে আরও এগিয়ে আসবে। জনগণকে দুদকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদানে উৎসাহিত করতে হটলাইন নম্বরসহ বড় আকারে ১০ হাজার স্টিকার ছাপানো হয়েছে। এসব স্টিকার সরকারি বিভিন্ন অফিসের সামনে বিলবোর্ড আকারে রাখা হবে; যাতে যে সরকারি অফিসে সেবাগ্রহীতা বা ভুক্তভোগীরা দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হবেন সেখানে বসেই আমাদের হটলাইনে অভিযোগ করতে উৎসাহিত হবেন। অর্থাৎ যখনই দুর্নীতির ঘটনা তখনই অভিযোগ।’ এতে দুর্নীতি প্রতিরোধে জনসম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

যা থাকছে কল-সেন্টারে : প্রাথমিকভাবে পাঁচজন প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা কল-সেন্টার পরিচালনা করবেন। এ কল-সেন্টারের কর্মীরা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে দুর্নীতিসংক্রান্ত যে কোনো কল গ্রহণ করার পর তত্ক্ষণাৎ সফটওয়্যার ডাটাবেজে তথ্য লিপিবদ্ধ করবেন। কল-সেন্টার কর্মীর জন্য ১০টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক প্রিন্টার, ভয়েস রেকর্ডার, নয়েজ রিডাকশন হেডসেট, সার্ভারের সঙ্গে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক কানেকশন থাকবে। থাকবে সর্বক্ষণ বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা। দুদক আরও জানায়, অভিযোগকারীর যেসব অভিযোগের বিষয়ে তত্ক্ষণাৎ সমাধান দেওয়া সম্ভব হবে না সে ক্ষেত্রে কল-সেন্টার কর্মী সরাসরি ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তার (এক বা একাধিক) সঙ্গে যোগাযোগ করে তত্ক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আর ওই ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হবেন উপপরিচালক কিংবা পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, কল-সেন্টারের সফটওয়্যারের প্রথম অংশে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমের আওতায় বেশকিছু তথ্য যে কোনো অভিযোগকারীর কল করার সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসবে।

এ ছাড়া অভিযোগকারীর ফোন নম্বর ও যে নামে তার রেজিস্ট্রেশন করা আছে, যে স্থান থেকে তিনি কলটি করছেন তার অবস্থান। এসব তথ্য নিশ্চিত করতে ও টোলফ্রি শর্টকোড বরাদ্দের জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), বিটিসিএল, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেলসহ সব মোবাইল অপারেটরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কল-সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতা রাজীব হাসান বলেন, কমিশন থেকে গত বছরের অক্টোবরে হটলাইন বিষয়ে অনুমোদন পাওয়ার পর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়। ‘১০৬’ হটলাইনে যে কেউ সহজে যাতে অভিযোগ করতে পারেন সেই সুবিধা দিয়ে কল-সেন্টারের কাজ গতকাল শেষ হয়েছে। কল-সেন্টারের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক উপপরিচালক মো. সামিউল মাসুদ বলেন, বর্তমান কমিশন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে কাজ করছে। একই সঙ্গে সংস্কারের মাধ্যমে দুদকে সেবাদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর