শনিবার, ৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সৌন্দর্যের স্বর্গ বলধা গার্ডেন

মোস্তফা কাজল

সৌন্দর্যের স্বর্গ বলধা গার্ডেন

রাজধানীর অপার সৌন্দর্যের স্বর্গ বলধা গার্ডেন। প্রকৃতিপ্রেমীরা অবসর কাটানোর জন্য বেছে নেন এ উদ্যান। এ বাগানে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৪০০ দুর্লভ প্রজাতির গাছ-গাছালি রয়েছে। এর মধ্যে সাইকি অংশে ৮ শতাধিক সুস্থ আর ১৫০টি গাছের অবস্থা যেনতেন। অনেকে বলেন, অক্সিজেনের ভাণ্ডার বলধা গার্ডেন। এ উদ্যানের দুটি ভাগ— একটি সাইকি, অন্যটি সিবিলি। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, সাইকি ও সিবিলি উভয় বাগানের গাছ দেখতে এসেছেন কয়েক শ উদ্ভিদপ্রেমিক। প্রতিদিন বিকালবেলা বিভিন্ন বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে এ বাগানে। যথাসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় বেশ কয়েকটি গাছ দেখতে সবুজ মনে হলো। এ ছাড়া কয়েকটি গাছে ধুলা জমে আছে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে বেহাল অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এ উদ্যানের পরিবেশ। এমন অভিযোগ উদ্যানে আসা সাধারণ মানুষের। ১৯০৯ সালে বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন বলধা এস্টেটের জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী। শুরুতে দেশের বিরল লতাপাতা, ঝোপজাতীয় ঘরোয়া উদ্ভিদ, অর্কিড ও ক্যাকটাস রোপণ করেন। এ অংশের নাম দেন সাইকি বা আত্মা। ১৯৩৬ সালে এ অংশের গাছপালার বংশ বিস্তারের জন্য আরও ৩ দশমিক ৮ একর জমি ব্যবহার করেন তিনি। এ অংশের নাম দেন সিবিলি বা প্রকৃতির দেবী। বলধা গার্ডেনের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে বন বিভাগ। গার্ডেনের দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের ফরেস্টার বশির আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নানা সংকটের মধ্যেও মূল্যবান গাছ-গাছালিগুলো সুস্থ রেখেছি।’ এ ছাড়া বলধা গার্ডেনের বিরল উদ্ভিদ সংরক্ষণে মূল বাগান ঠিক রেখে এর আদলে আরও একটি বলধা গার্ডেন তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ও গবেষক মোকাররম হোসেন। তিনি বলেন, বাগানটির বর্তমানে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তা থেকে বের করে সমৃদ্ধ উদ্ভিদ প্রজাতিকে বাঁচাতে হলে এর আদলেই আরও একটি বাগান তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া প্রধান প্রধান গাছগুলো অক্ষত রেখে এবং বর্তমান বাগানকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে চারা-কলমের মাধ্যমে বাগানের গাছগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বলধা গার্ডেনের আদলে আরেকটি বাগান তৈরি করা যাবে। দেশের কোনো সুবিধাজনক স্থানে এ বাগানের সব উদ্ভিদ প্রজাতি নিয়ে হুবহু আরেকটি বাগান তৈরি করে দেশের শত বছরের ঐতিহ্য এই বাগানটি রক্ষা করা সম্ভব।

সরেজমিন আরও দেখা যায়, বালি জমে বিবর্ণ স্বর্ণ অশোক গাছ। এ গাছের চূড়ায় সোনা রঙের ফুল ফুটে রয়েছে। দক্ষিণের উঁচু ভবনের ছায়ার কারণে বলধা গার্ডেনে এই বিরল গাছটির অবস্থা মৃতপ্রায়। স্বর্ণ অশোকের মতো উদ্ভিদের জীবন্ত পাঠাগার রাজধানীর ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের কনকমুধা, রসুনদী, বিচিত্র বকুল, সুরভি, ভূতনাগিনী, উদয়পদ্ম, কণ্টকলতা, প্যাপিরাস, ধূপগাছ, শ্বেতশিমুলসহ অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ বিপদাপন্ন অবস্থায় টিকে আছে। এ ছাড়া অসংখ্য বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে : নানা জাতের অর্কিড, জলজ উদ্ভিদ শাপলা, নীলপদ্ম, হলুদ শাপলা, আমাজান লিলি। এ ছাড়া তিন পাশে উঁচু ভবন থাকায় দিনের অধিকাংশ সময় রোদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ বাগান। মাঝে উঁচু গাছগুলো বড় হওয়ায় নিচের দেশ-বিদেশের বিরল গাছগুলোকে কোনোরকমে টিকে থাকতে দেখা যায়। প্রতিটি গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে লাগানো হয়েছে টিনের নামফলক। পেরেক ঠোকা স্থানগুলোয় পচন ধরেছে। সিবিলি অংশে ঢুকতেই চোখে পড়বে উদয়পদ্ম গাছের টিনের নামফলক ঢুকে গেছে গাছের শরীরের ভিতরে। আরও ভিতরে হাঁটতে থাকলে চোখে পড়বে জলজ উদ্ভিদের চৌবাচ্চাগুলো। সূর্যঘড়ির সামনের চৌবাচ্চায় সদ্য মারা গেছে জলজ উদ্ভিদ। পুরো বাগান ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে শুধু আবর্জনার ভাগাড়। দেওয়া হয়নি পানি। এ ছাড়া এ বাগানে বেশ কয়েক বছর ধরে হাঁটতে আসা আরাফাত আলী জানান, চারপাশে উঁচু ভবন ও রাস্তা করায় বাগান অনেক নিচু হয়ে গেছে। বর্ষায় অনেক নোংরা পানি ও বর্জ্য ঢোকে। পরে পানি চলে গেলেও বর্জ্যগুলো বাগানে রয়ে যায়। এ বর্জ্যগুলো গাছের জন্য ক্ষতিকর। ফলে গাছগুলো খাদ্য তৈরি করতে পারছে না। এসব কারণে উদ্ভিদবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বেড়াতে আসা রাকিবুল হক জানান, বাগানে সারা দিন লোকের ভিড় থাকে। দর্শনার্থীদের বিক্ষিপ্ত পদচারণে বাগানের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বেবী ইসলাম বলেন, ‘বলধা গার্ডেন আমাদের প্রাণ।’

সর্বশেষ খবর