পর্যটনের তীর্থস্থান সিলেট। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে থাকা সিলেট দর্শনে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন পর্যটকরা। কিন্তু বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখন নেতিবাচক সুর। বিশেষ করে সিলেট-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের করুণ দশায় পর্যটকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আঞ্চলিক মহাসড়কটির দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করলেই বদলে যাবে সিলেটের পর্যটন চিত্র। ওয়াকিফহালদের মতে, পাহাড়, টিলা, হাওর, নদী, সবুজ নিসর্গ, ঝরনাধারা এসব কিছু মিলিয়ে পর্যটনের ভূস্বর্গ সিলেট। রূপ-সৌন্দর্যের ফল্গুধারায় রূপবতী সিলেটের মায়ায় প্রতিনিয়তই আটকা পড়ছেন পর্যটকরা। এ জন্য মানসম্মত হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, রেস্টুরেন্ট, রেস্টহাউস গড়ে উঠেছে। কিন্তু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখানকার পর্যটন শিল্প সামনে এগোতে পারছে না। তারা মনে করছেন, সিলেটের পর্যটন খাতের বিকাশে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়েই দেশের বৃহৎ পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ, জল-পাথর-পাহাড়ের মিতালি বিছনাকান্দি, অপরূপ ঝরনার পাংথুমাই, দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুলসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটে যেতে হয়। কিন্তু প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের দশা করুণ। ফলে পর্যটকরা এ পথ মাড়াতে চান না। সরেজমিন ঘুরেও দেখা গেছে, সিলেট-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত। সে সব গর্তে পানি জমে রীতিমতো পুুকুরের আকার ধারণ করেছে। পুরো সড়কটির কোথাও কার্পেটিংয়ের লেশমাত্র নেই। সড়কের অনেক স্থানেই কাদার ছড়াছড়ি, চাইলেই যে কেউ ধান গাছের চারা রোপণ করতে পারবেন! এ সড়কে বেশ কিছুদিন ধরে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলে না বললেই চলে। সিলেট থেকে রিজার্ভের এ সড়ক দিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস বা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যেতে রাজি হন না চালকরা। প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০১৪ সালের ১৪ মে সিলেট সফরে এসেছিলেন। এদিন মন্ত্রী সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক পরিদর্শনে গিয়ে সড়কটিকে ‘ক্যান্সার আক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। সড়কটি সংস্কারে স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকবার আন্দোলন হয়েছে। সড়কে ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১৬ সালের ৩১ মে সিলেট-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কটির সংস্কারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি সই হয়। প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয় ৪৪২ কোটি টাকা। সড়ক উন্নয়নে সই হওয়া দুটি প্যাকেজের আওতায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক বাঁধ, ১৩ কিলোমিটার সড়ক রিজিড পেভমেন্ট, ১৭ কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, একটি সেতু ও দুটি কালভার্ট এবং প্রায় ৩০ কিলোমিটার ফুটপাথসহ ড্রেন নির্মাণ করার কথা। চুক্তি অনুযায়ী ৩৪ মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে অনেকটা ঢিমেতালে সংস্কার কাজ চলছে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের পর্যটনের জন্য সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এর সংস্কার কাজে গতি থাকা প্রয়োজন। সড়কটি দ্রুত সংস্কার হলে সিলেটের পর্যটনের আরও বিকাশ ঘটবে। এ ব্যাপারে সিলেটের পর্যটনে গুরুত্বপূর্ণ গোয়াইনঘাটের উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কটি বেহাল। অনেক দেনদরবারের পর সড়কটিতে সংস্কার কাজ হচ্ছে। এ কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। তাতে উপকৃত হবে সিলেটের পর্যটন খাত।’
