রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর জঙ্গি সোহেল মাহ্ফুজ গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়ঙ্কর জঙ্গি সোহেল মাহ্ফুজ গ্রেফতার

গুলশান হামলার অন্যতম  পরিকল্পনাকারী এবং ভারতের খাগড়াগড়ে বোমা হামলার সন্দেহভাজন ভয়ঙ্কর জঙ্গি আবদুস সবুর ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেল ওরফে নসরুল্লাহকে    (৩৩) তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত ভোররাত ২টা ৪০ মিনিটে তাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার কানসাট এলাকার চৌডালা সড়কের ফজল মিয়ার আমবাগানের টংঘর থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুরনো জেএমবির (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) এই শীর্ষ নেতা গত ২০১৪ সালে নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছিলেন জানিয়ে পুলিশ বলছে, সোহেল মাহফুজ জেএমবির ভারত শাখারও আমির ছিলেন। গ্রেফতারকৃত বাকিরা হলো— মোস্তফা কামাল ওরফে জামাল, হাফিজুর রহমান ওরফে হাসান এবং জুয়েল ওরফে ইসমাইল। গত বছর ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর কাবলিপাড়ার রেজাউল করিমের ছেলে সোহেল মাহফুজকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। এর তিন বছর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণকাণ্ডেও তাকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সদর দফতর, বগুড়া পুলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের যৌথ অভিযানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোহেল মাহফুজকে তার তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, ২০০৪ সালে বাগমারায় সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জেএমজেবি (জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ) হয়ে কথিত সর্বহারা নামের অভিযানে ককটেলের আঘাতে তার হাতের কিছু অংশ উড়ে যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করলে সে ভারতে পালিয়ে যায়। তখন পলাতক জেএমবির প্রবাসী নেতাদের নিয়ে গঠিত জেএমবির আমির হয় বলে আমাদের কাছে তথ্য আসে। ভারতে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা হামলায় তার নাম আসার পর সে ২০১৪ সালে দেশে ফিরে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। তার অবদান, যোগ্যতার কথা বিবেচনায় তাকে মজলিসে শূরা সদস্য মনোনীত করা হয়। ভারতে তাকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। ভারতে সে নানারকম অপতত্পরতার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে ভারতীয় পুলিশ আমাদের জানিয়েছিল।

হলি আর্টিজান তদন্তে সোহেল মাহফুজের নাম এসেছে উল্লেখ করে সিটি প্রধান বলেন, সোহেল মাহফুজ নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে এ বিষয়টি আমরা আগেই জানতে পারি। দেশে ফিরে এলেও ভয়ঙ্কর এই জঙ্গির একটি হাতের কিছু অংশ কাটা থাকায় বেশি মুভ করত না। হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনা প্রণয়নে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রাজধানীর কল্যাণপুরের ঘটনায়ও সোহেল মাহফুজের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিককালে রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা ছিল। অবস্থানগত সুবিধা এবং অস্ত্র-বিস্ফোরক সম্পর্কে ভালো ধারণার কারণে অস্ত্র আনয়নের জন্য তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতারে হলি আর্টিজান মামলার তদন্তে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

গাইবান্ধার চরে তৃতীয় দিনও মেলেনি কিছুই : গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, জঙ্গি আস্তানার খোঁজে তৃতীয় দিনের মতো গতকাল গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালালেও কোথাও কিছুই মেলেনি। ফলে অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। ভোরে শুরু হওয়া অভিযান চলে সকাল ৮টা পর্যন্ত। অভিযানে কাউকে আটক করা হয়নি।

একইভাবে অস্ত্রশস্ত্র বা কোনো জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সাঘাটার হলদিয়া ইউনিয়নের চরদিঘলকান্দি ও প্রজাপতি চরসহ কয়েকটি চরে অভিযান চালানো হয় বলে জানান সাঘাটা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মইনুল হক অভিযানে নেতৃত্ব দেন। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসহ জেলা, গোয়েন্দা ও সাঘাটা থানা পুলিশ অভিযানে অংশ নেয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মইনুল হক বলেন, জঙ্গি আস্তানার সন্ধান ও তালিকাভুক্ত মামলার আসামি গ্রেফতার এবং নৌডাকাতি প্রতিরোধে চরাঞ্চলে এ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযানে আস্তানা বা কোনো জঙ্গি পাওয়া যায়নি। ফলে অভিযান শেষ করা হয়। অভিযান অব্যাহত থাকবে। এরপর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে অভিযান চালানো হবে।

উল্লেখ্য, ৫ জুলাই প্রথম দিন সদর উপজেলার মোল্লার চর ও কামারজানি চরে অভিযান চালিয়ে এক ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। ৬ জুলাই দ্বিতীয় দিন ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে আটক বা কোনো জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায়নি।

সর্বশেষ খবর