সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

লাশের ভাগাড় ঢাকা মেডিকেল মর্গ

৫ ফ্রিজের ৩টিই বিকল নষ্ট হচ্ছে আলামত

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে লাশের স্তূপ জমেছে। ফ্রিজে রাখার জায়গা নেই, তাই এগুলো একটি রুমে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ফ্রিজেও রয়েছে সমস্যা। কারণ পাঁচটি ফ্রিজের মধ্যে তিনটিই নষ্ট। এমন অবস্থায় লাশগুলো পচে যাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে আলামত।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, তিন বছর ধরে পড়ে আছে খোকন নন্দী ওরফে রাজিব চৌধুরীর লাশ। লাশের দাবিদার নিয়ে দুই ধর্মের দুই স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে দাফন-দাহ কোনোটাই হচ্ছে না। এ ছাড়া আরও চার বিদেশি এবং চার জঙ্গির লাশ রাখা হয়েছে দুই ফ্রিজে। পাঁচ ফ্রিজের তিনটি নষ্ট থাকায় মৃত নবজাতক, খুন, ধর্ষণ, আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ৫০টি লাশ মর্গে জমা হয়ে আছে। ঈদের পর থেকে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ লাশ না নিয়ে যাওয়ায় সেগুলো পচে উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে।

মর্গ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের পাঁচটি ফ্রিজের তিনটি নষ্টই শুধু নয়, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে এখানকার সব এসি। একটি ফ্রিজের ড্রয়ারে ৪টি লাশ রাখার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু লাশ সংরক্ষণে ড্রয়ারে চাপাচাপি করে রাখা হচ্ছে ৪টির জায়গায় ৮টি। রাজধানীর অন্য হাসপাতালের তুলনায় এখানে সবচেয়ে বেশি লাশ আসে। ঢামেক মর্গে গড়ে প্রতিদিন লাশ আসে ৮-১০টি। তাই রাখার জায়গা না থাকায় লাশ স্ট্রেচারে করে স্তূপ করা হয়েছে। মর্গের ফ্রিজে চারটি জঙ্গির, চারটি ভারতীয় নাগরিকের, একটি দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিকের এবং খোকন নন্দীর লাশ রয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৫টি অজ্ঞাত লাশ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ২৫টি নবজাতকের লাশ রয়েছে। ফ্রিজের বাইরে এসব লাশ একটি রুমে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সংরক্ষণের অভাবে লাশ পচে গলে নষ্ট হচ্ছে আলামত। সূত্র জানায়, রাজধানীর অন্য থানা এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রায় তিন হাজরেরও বেশি লাশের ময়নাতদন্ত হয় এই হাসপাতালে। অথচ এই বিপুল পরিমাণ লাশ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা তো নেই-ই, আবার সেখানে ৫টির মধ্যে ৩টি ফ্রিজই নষ্ট।  সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মর্গে স্তূপ করে রাখা হয়েছে প্রায় ৫০টির মতো লাশ। জমে থাকা লাশ পচে গলে আসছে উৎকট গন্ধ। নাকে রুমাল চেপে দাঁড়ানোরও উপায় নেই মর্গের আশেপাশে। ফলে দূষিত হচ্ছে হাসপাতালের পরিবেশ। এসি এবং ফ্রিজ নষ্টের ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, এ ব্যাপারে একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই মেরামতের অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ফ্রিজ এবং এসি। ঢামেক মর্গের মরচুয়ারি অ্যাসিসট্যান্ট সিকান্দার আলী বলেন, নবজাতকসহ প্রায় ৫০টি বেওয়ারিশ লাশ মর্গে পড়ে আছে। ঈদের আগে পড়ে থাকা ১১টি লাশ নিয়েছিল আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম। এরপর বার বার যোগাযোগ করা হলেও তারা লাশ নিতে আসেননি। লাশগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।  জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেওয়ারিশ লাশ আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম দাফন করে থাকে। আজিমপুর কবরস্থানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেখানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই এসব লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, বৃষ্টির কারণে জুরাইন কবরস্থানে পানি জমে আছে। এর মধ্যে লাশ দাফন করা সম্ভব হচ্ছে না। কবরস্থান পরিদর্শন করে এসে এ বিষয়ে আজ আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। 

সর্বশেষ খবর