সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রবাসীদের বীমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভাগ্য ফেরানোর আশায় বিদেশে যাওয়া শ্রমিকের অনেকেই ফেরেন লাশ হয়ে। অনেকে আবার কোম্পানি বন্ধ বা লে-অফ হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে চাকরি হারান। এতে অসহায় হয়ে পড়ে তাদের পরিবার। শূন্যহাতে ফিরে আসতে হয় প্রবাসী কর্মীদের। এসব বিবেচনায় বিদেশগামী ও প্রবাসী সব শ্রমিককে বাধ্যতামূলকভাবে শতভাগ বীমার আওতায় আনা হচ্ছে। তিন ধরনের বীমার বিধান রেখে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এটি চূড়ান্ত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি পাঠানো হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশ যাত্রার সময় থেকে পরবর্তী এক মাসের জন্য কর্মীরা পাবেন স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা। চাকরি হারানো, বাফার টাইম, লে-অফ বা কোম্পানি বন্ধের জন্য পাবেন বীমা সুবিধা। এ ছাড়া প্রবাসে কর্মকালীন সময়ের জন্য পাবেন জীবন বীমা সুবিধা।  আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) গকুল চাঁদ দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে বিদেশগামী ও প্রবাসী কর্মীদের শতভাগ বীমা সুবিধার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশ যাওয়ার সময় থেকে শুরু করে প্রবাসীদের কর্মকালীন সময় পর্যন্ত তিন ধরনের বীমা সুবিধা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব বীমা সুবিধা কার্যকর হলে প্রবাসী কর্মীরা অনেক দিক থেকে ঝুঁকিমুক্ত হবেন।  খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, প্রবাসীরা প্রাথমিকভাবে তাদের কর্মমেয়াদের জন্য জীবন বীমা পলিসি ক্রয় করতে পারবেন। জীবন বীমার অঙ্ক দুই লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনো প্রবাসী শ্রমিক এই বীমা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। বীমা চলাকালীন বীমা গ্রহীতার মৃত্যু অথবা অঙ্গহানি হলে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে। মৃত্যুর ক্ষেত্রে শতভাগ বীমা দাবি পরিশোধযোগ্য। চাকরি হারানো, কোম্পানি লে-অফ বা বন্ধের জন্য সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকার বীমা সুবিধা পাওয়া যাবে। বীমার মেয়াদ হবে এক বছর। তবে এনডোর্সমেন্টের মাধ্যমে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো যাবে। যদি বীমা গ্রহীতা কর্মে নিয়োগের এক মাসের মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত হন তবে ক্ষতিপূরণ হবে বীমা অঙ্কের ৮০ শতাংশ, তিন মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে বীমা অঙ্কের ৭০ শতাংশ, পাঁচ মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে ৬০ শতাংশ, ৭ মাসের মধ্যে ৫০ শতাংশ, ৭ মাস থেকে ৯ মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে ৪০ শতাংশ এবং ৯ মাসের অধিক সময়ের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে ক্ষতিপূরণ হবে বীমা অঙ্কের ২৫ শতাংশ। তবে নিজ ইচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিলে, অদক্ষতা, শারীরিক অক্ষমতা বা স্বাস্থ্যগত কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি পেলে এবং বীমা গ্রহীতা নিজের অসদাচারণ-অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে চাকরিচ্যুত হলে, নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে বা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে বীমার ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।  বিদেশে কর্মরত এবং বিদেশে কাজ করতে যাবে এমন দক্ষ, অদক্ষ ও সেমি দক্ষ শ্রেণির শ্রমিকরা এই বীমা সুবিধা পাবেন। তবে যারা ফ্রি ভিসায় বিদেশে যাবেন, তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা ব্যতীত অন্য কোনো বীমা সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। বিদেশ যাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর হতে এ সংক্রান্ত ছাড়পত্র সংগ্রহের আগেই এককালীন প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে।  এর আগে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বীমা অনুমোদনের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে ওই সময় প্রক্রিয়াগত জটিলতাসহ বেশকিছু কারণে সেই উদ্যোগ আটকে যায়। ওই সময় এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি হয়েছিল। খসড়া নীতিমালায় উল্লিখিত বীমার আওতায় বীমা গ্রহীতার সন্তানের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, বিদেশে মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকের মরদেহ ফিরিয়ে আনা ও সমাহিত করা ছাড়াও পরিবারকে অর্থসহায়তা দেওয়ার নিয়ম রাখা হয়েছিল ওই খসড়া নীতিমালায়।

সর্বশেষ খবর