শিরোনাম
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিহারি ক্যাম্পে আগুনের ঘটনা

তিন বছরেও জড়িতরা শনাক্ত হয়নি, উধাও পরিকল্পনাকারীরা!

মাহবুব মমতাজী

তিন বছর আগে রাজধানীর পল্লবী বিহারি ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের ৯ জনসহ মোট ১০ জনের মৃত্যু এবং ক্যাম্পবাসীর ওপর হামলা, বাড়ি-ঘর  লুটপাটে জড়িতদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে, সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা এর সঙ্গে জড়িত। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত কিন্তু পরিকল্পনাকারীদের পাওয়া যাচ্ছে না।  এই সূত্র বলছে, জড়িতদের শনাক্ত করে ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা দেওয়া হয়নি। দ্রুত মামলাটির অগ্রগতি না দেখিয়ে তা সিআইডিতে পাঠানোর আবেদন করা হবে। প্রসঙ্গত, সরকারি কাজে বাধাদান, লুটপাট, ভাঙচুর ও ১০ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্যাম্পবাসীর বিরুদ্ধে হওয়া ছয়টি মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পশ্চিম। তবে ঘটনার তিন বছরেও তদন্তের অগ্রগতি না থাকায় অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা।  বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, ২০১৪ সালের ১৩ জুন পবিত্র শবে বরাতের গভীর রাতে তাদের সঙ্গে পাশের বাউনিয়াবাদের যুবলীগের নেতা জুয়েল রানার সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে যুবলীগ নেতা শাহিন, আলম ও সোহেল জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পরদিন ১৪ জুন সকালে ক্যাম্পের আটটি ঘরে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ইয়াসিন আলীর পরিবারের নারী-শিশুসহ ৯ জন দগ্ধ হয়ে মারা যান। তার এক মেয়ে ফারজানা দগ্ধ হলেও কাটা বেড়া দিয়ে সেদিন কোনোমতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আর পুলিশের গুলিতে নিহত হন ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. আজাদ। সেদিন বাইরে থাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যান ইয়াসিন। পরবর্তীতে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পল্লবীর পূরবী সিনেমা হলের সামনে বাসের ধাক্কায় তারও মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ড, ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হলেও তখন পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি। এসব ঘটনায় পুলিশ চারটি ও তাদের পছন্দের দুই ব্যক্তিকে দিয়ে দুটি মামলা করায়। মামলায় মোট ৩ হাজার ৭১৪ জন ক্যাম্পবাসীকে আসামি করা হয়। বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা সৈকত জানান, ঘটনার দিন পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই। রবিন ও রবিউল জানান, হামলাকারীরা এখনো এলাকায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে। অথচ পুলিশ তাদের কাউকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করছে না। উল্টো আমাদেরই মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে। হামলা ও পুড়িয়ে ৯ জনকে হত্যার ঘটনায় পল্লবী থানায় মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি। পরে ইয়াছিন বাদী হয়ে মামলা করতে আদালতে যাওয়ার দুই দিন আগে তাকে বাসচাপায় মেরে ফেলা হয়। এ জন্য আর কেউ এখন আদালতে মামলা করার সাহস পাচ্ছে না। জানা গেছে, ক্যাম্পের যে ঘরে ইয়াছিনের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধূ, নাতিসহ ৯ জন আগুনে পুড়ে মারা যান— সেখানে একটি টিনশেডে মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে। ওই ইয়াছিনের পরিবারের বেঁচে যাওয়া একমাত্র সদস্য কিশোরী ফারজানা মোহাম্মদপুর মার্কেট ক্যাম্পে খালু আসলাম মিয়ার কাছে থাকেন। সেখানে স্থানীয় প্রেসিডেনশিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওই ঘটনায় এখনো কাউকে শনাক্ত করা হয়নি। তবে তদন্ত এখনো অব্যাহত আছে।  তদন্তে জড়িতদের শনাক্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর