মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

নিজামুল হক বিপুল

ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। রীতিমতো মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ করে হাট বসানো, গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড এই মহাসড়কের কয়েকটি স্থানকে করে তুলেছে ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনাপ্রবণ। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড় থেকে একেবারে সিলেট পর্যন্ত মহাসড়কের স্থানে স্থানে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। এসব গর্ত জোড়াতালি দিয়ে এই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। সরেজমিন এসব চিত্র পাওয়া গেছে।

ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এ বিশাল দূরত্বের মহাসড়কে যন্ত্রণা শুরু হয় কাঁচপুর সেতু পার হওয়ার পরই। বিশেষ করে ভুলতা থেকে যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন এবং ছোট-বড় সব যানবাহনকে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় এই মহাসড়কে। সরেজমিন দেখা গেছে, ভুলতায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলায় এখানে প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘদিনেও ফ্লাইওভারের কাজ শেষ না হওয়ায় রাস্তাটিও সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে খানাখন্দে ভরে আছে মহাসড়কের ভুলতা এলাকা।

ভুলতা পার হয়ে মাধবদী পৌঁছাতেই তীব্র যানজটে পড়তে হয় এ সড়কে চলাচলকারী সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, কুটি চৌমুহনী অভিমুখী যানবাহনকে। সরেজমিন দেখা গেছে, মাধবদীতে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কজুড়ে মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। কর্তব্যরত পুলিশ সড়ক আইল্যান্ডে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগে যানজটে আটকে থাকা গাড়িগুলো প্রায়ই উল্টো পথে চলতে শুরু করে। এ অবস্থায় সড়কজুড়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, মাধবদী বাজার পার হয়ে পাঁচদোনা চৌরাস্তায় গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে আরও ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে চৌরাস্তার চারপাশজুড়ে সড়কে বিশাল বিশাল গর্ত। তাতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় যানবাহন চলাচল করে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। নরসিংদী চৌরাস্তায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। বারৈচা বাজার অতিক্রম করার সময় দেখা গেছে, যানবাহনগুলো প্রায়ই উল্টো পথে চলাচল করছে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে সিলেটগামী যানবাহনগুলো এই বাজার অক্রিতম করে উল্টো পথে। এর কারণ দুই লেনের এই সড়কের এক লেনের পুরোটাই দখল করে আছে সবজির হাট। প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বারৈচায় মহাসড়কের ওপর সবজির হাট বসে। এতে করে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন বা সড়ক ও জনপথ বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নেয় না। একই অবস্থা ভৈরব বাজারেও। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ সেতু পার হয়ে ভৈরব বাজার পৌরসভায় পৌঁছামাত্রই একেবারে মেঘনা সেতুর টোল প্লাজার আগে সড়ক বিভাগের বাংলোর সামনে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের দুই পাশে লোকাল গাড়ির জটলা এবং রাস্তার পাশেই ভৈরব বাজার বাস টার্মিনাল থাকায় যানজটের ভোগান্তি এখানকার নিত্যদিনের। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আরও বিড়ম্বনা শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড পার হওয়ার পর। তিতাস নদীর ওপর বছরের পর বছর ধরে যান চলাচলের অনুপযোগী ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়েই দেখা মেলে মহাসড়কজুড়ে শুধুই ছোট-বড় গর্ত আর গর্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবল নবীগঞ্জ, মৌলভীবাজারের শেরপুর পেরিয়ে একেবারে সিলেট পর্যন্ত সড়কের এমন বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের। মহাসড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। মহাসড়কের এমন করুণ অবস্থার মধ্য দিয়েই যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে প্রতিদিন। আগে থেকেই খানাখন্দে ভরা এই মহাসড়কের আরও বেহাল অবস্থা হয়েছে চলতি বর্ষায় পিচ উঠে যাওয়ায়। গর্তগুলো ক্রমেই বৃহৎ আকার ধারণ করছে। সরেজমিন দেখা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সিলেট অঞ্চল সড়ক মেরামতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে গর্ত ভরাটে। শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায় দেখা গেছে, সওজের ট্রাকে করে গর্তগুলোতে পাথর ফেলে ভরাটের চেষ্টা চলছে। এতে একদিকে গর্ত ভরাট হচ্ছে অন্যদিকে প্রবল বৃষ্টির কারণে এবং দ্রুত গতিতে গাড়ি চলাচলের কারণে পাথর উড়ে গিয়ে সেই পুরনো গর্তই ভেসে উঠছে।

সর্বশেষ খবর