বুধবার, ১২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আমলাতান্ত্রিকতার অক্টোপাসে বে-টার্মিনাল

প্রকল্পে গতি নেই, ২০২৩ সালে চাপ সামলানোর অনুপযোগী হবে বন্দর

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিকতার ‘অক্টোপাসে’ ঘুরপাক খাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প। পদে পদে সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতা। ধীরগতিতে চলছে প্রকল্পের যাবতীয় কাজ। বন্দরের মহাগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি শিগগিরই বাস্তবায়িত না হলে কনটেইনার জটসহ নানা সমস্যায় পড়বে বন্দর। বিদেশে ইমেজ সংকটে পড়বে দেশের অর্থনীতির ‘পাইপ লাইন’ খ্যাত এ বন্দর। ভোগান্তি বাড়বে ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীদের দাবি, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান কনটেইনার জট এবং দেশের আমদানি-রপ্তানি যে হারে বাড়ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম ধরে রাখতে বে-টার্মিনালের বিকল্প নেই। দ্রুততার সঙ্গে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে ২০২৩ সালের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির চাপ সামলানোর অনুপযোগী হয়ে যাবে এ বন্দর। তাই দ্রুততার সঙ্গে বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) জাফর আলম বলেন, ‘নানা জটিলতার কারণে বে-টার্মিনালের কাজ শিগগিরই শুরু হচ্ছে না। পদে পদে নানা সমস্যার কারণে এখনো প্রত্যাশিত গতিতে এগোয়নি এ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের জন্য সিডিএর কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ পেতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। এখন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে ফাইল চালাচালি হচ্ছে। আরও কিছু পেপারওয়ার্ক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে বে-টার্মিনালের কাজ।’

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের প্রধান এ বন্দর দিয়ে প্রতিবছর ২৩ মিলিয়ন টিইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়, যা প্রতিবছর ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। বন্দরের এখন যে ধারণক্ষমতা, তা চিন্তা করলে ২০২৩ সালের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির চাপ সামলানোর অনুপযোগী হয়ে যাবে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নৌ, রেল ও সড়কপথের কারণে বে-টার্মিনালের জন্য এ রকম উপযুক্ত পরিবেশ পৃথিবীর অনেক দেশেই নেই। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দর আমদানি-রপ্তানিতে ১০০ বছরের দক্ষতার সক্ষমতা অর্জন করবে।’ জানা যায়, দেশের অন্যতম প্রধান এ বন্দরে প্রতিবছর আড়াই হাজারের বেশি জাহাজ নোঙর করে পণ্য বোঝাই ও খালাস করতে। ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে আরও ব্যস্ত হয়ে যাবে বন্দর। বাড়বে জাহাজ নোঙর করার সংখ্যা। বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং ব্যবস্থা আরও গতিশীল করতে বে-টার্মিনাল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের প্রাথমিক কাজের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনুমোদন নিতেই চলে যায় দুই বছর। দীর্ঘসূত্রতার পর সিডিএ এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। সিডিএর অনুমোদনের পর শুরু হয় প্রকল্পের ভূমি জোগানের কাজ। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ৯০৭ একর ভূমি চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বরাবর চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ যেখানে বে-টার্মিনাল নির্মাণ করতে চাইছে, সেখানে ৮২০ দশমিক ৫৬ একর খাসজমি আছে। বাকি ৮৬ দশমিক ৩৭ একর জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। সব জমি বে-টার্মিনালের জন্য কিনতে হলে প্রয়োজন হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইউএস। প্রায়ই ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় কনটেইনার জট থাকে বন্দরে। এ ছাড়া জেটি ও বহির্নোঙর অপেক্ষমাণ জাহাজে থাকে ঠাসা। বন্দরে কনটেইনার রাখার অতিরিক্ত জায়গা না থাকায় ব্যবসায়ীরা জাহাজে কনটেইনার রাখতে বাধ্য হন। এতে তাদের অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হয়। এ কারণে সবাই দ্রুত বে-টার্মিনাল নির্মাণের পক্ষে।

সর্বশেষ খবর