শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশে ফিরছে ভারতে পাচারকৃত বাংলাদেশি তরুণীরা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারত গেলে নাচের শিক্ষিকার কাজ পাইয়ে দেওয়া হবে। সে আশাতেই সাহস করে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি তরুণী পায়েল (১৬)। এরপর অন্ধকারাচ্ছন্ন এক সন্ধ্যায় নৌকায় করে সীমান্তবর্তী এক নদী পার হয়ে সোজা ভারতে। কিন্তু ভারতে প্রবেশের কয়েক দিন পরই আশা ভঙ্গ হয় পায়েলের। তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয় বাংলাদেশের নিজের বাড়ি থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য মহারাষ্ট্রের পুণের একটি বেশ্যালয়ে। সেখানে ঢোকার পরই পায়েলের ওপর নেমে আসে অত্যাচার। মাত্র নয় মাস আগে ওই নিষিদ্ধ পল্লী থেকে পায়েলকে উদ্ধার করে পুণের একটি সেফ হোমে (রেসকিউ ফাউন্ডেশন) পাঠানো হয়। কোনো দিন নিজের বাড়ি ফিরে যেতে পারবে— এ আশাই ছেড়ে দিয়েছিল পায়েল।

ঠিক একই সময়ে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব দ্য কাউন্সেলর মোশাররফ হোসেন ভারতে পাচার হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের উদ্ধারের পর তাদের দেশে ফেরানোর ব্যাপারে ট্রাভেল পারমিট অনুমোদন করছেন। মোশাররফ জানান, ‘আমি দেখেছি যে বাংলাদেশের অনেক ছেলেমেয়ে কষ্ট পাচ্ছে, তারা বাড়ি ফেরার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে। কেরলে উদ্ধার হওয়া তরুণীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম, সেখানে দেখলাম সাত বছর ধরে বাড়ি ফেরার জন্য একটি সরকারি হোমে অপেক্ষা করছে তারা।’ বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ২০১৫ সালে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগ দেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি তরুণীদের দ্রুত প্রত্যর্পণের ব্যাপারে যথেষ্ট অগ্রগতি এনেছেন তিনি। ভারতের একাধিক সেফ হোম পরিদর্শনে যান তিনি। এমনকি দুই সপ্তাহ আগেই পায়েল পুণের যে হোমে ছিল সেই রেসকিউ ফাউন্ডেশনেও যান। সেখানেই ওই কর্মকর্তাকে নিজের কাহিনী তুলে ধরে পায়েল। পায়েলের বক্তব্য শোনার পরই তা যাচাই করা হয়। এরপর গত সপ্তাহেই পায়েলের ট্রাভেল পারমিটও অনুমোদন করা হয়। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশে নিজের স্বজনদের কাছে ফিরে যাবে সে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের দায়িত্বে এসে এখন পর্যন্ত ৪৩৮ বাংলাদেশি তরুণীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন মোশাররফ; যার অর্ধেকই গত ছয় মাসের ব্যবধানে ফিরে গেছে। আর নিজের দেশে ফিরে যাওয়া বাংলাদেশি তরুণীর বেশির ভাগটাই ছিল ভারতের দ্বিতীয় জনবহুল রাজ্য মহারাষ্ট্রে। মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্ডিয়া’ নামের একটি এনজিওর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জ্যোতি নালে জানান, ‘হাইকমিশনের কর্মকর্তারা এ বিষয়টিতে উৎসাহ নেওয়ার পর থেকে বর্তমানে এ কাজে গতি এসেছে।’ পুনের রেসকিউ ফাউন্ডেশনের সুপার শিনি পাদিয়ারা জানান, ‘অতীতে ট্রাভেল পারমিট আসার আগে বাংলাদেশি তরুণী-নারীদের দুই থেকে তিন বছর সেফ হোমে কাটাতে হতো। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের তৎপরতার ফলে এ কাজে গতি এসেছে। চলতি বছরের মে মাসেই ২২ জন তরুণী হোম থেকে বাড়িতে ফিরে যায় এবং ১৯ তরুণীর মধ্যে ১৮ জনের ট্রাভেল পারমিট এসে পৌঁছেছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর