শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
সীতাকুণ্ডে অজ্ঞাত রোগ

নির্ণয় হয়নি মৃত্যুর কারণ, আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পল্লীতে অজ্ঞাত রোগে এক সপ্তাহে ৯ শিশু মৃত্যুর কারণ, রোগের ধরন ও নাম নির্ণয় করা যায়নি। তবে গতকাল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল আক্রান্ত শিশুদের পর্যবেক্ষণ শেষে তাদের রক্ত, নাকের পানি, মুখের লালাসহ প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করেছে। নমুনাগুলোর ল্যাবরেটরি টেস্ট শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানায় প্রতিনিধিদল। তবে আইসিডিসিআরের প্রতিনিধিদল প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আক্রান্ত শিশুরা অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভুগছিল বলে জানায়। প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহমদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল ফৌজদারহাট ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছে। অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা, সংক্রমণ ও পাহাড়ে অবস্থানগত কারণে একসঙ্গে ৯ শিশুর মারা যাওয়াটা অস্বাভাবিক। এর নেপথ্য কোনো কারণ, স্থানীয় অবস্থান, প্রকৃত রোগ নির্ণয় ও রোগ নিয়ে গবেষণা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন সচেতন মহল। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির ত্রিপুরা পল্লীতে অজ্ঞাত রোগে এক সপ্তাহেই ৯ শিশুর মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। বুধবার একদিনেই চার শিশুর মৃত্যু হয়। ওইদিন বিকাল ও রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জন এবং ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ৩০ জনকে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া গতকালও বিআইটিআইডি আরও আটজনকে ভর্তি করা হয়। গতকাল দুপুরে চমেক হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৯ নম্বর শিশুস্বাস্থ্য ওয়ার্ডে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ওয়ার্ডের একটি কর্নারে ১৩ জনকে একসঙ্গে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া একজন আছে শিশু নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদের ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, আইসিডিসিআরের চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল আক্রান্ত শিশুদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছে। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরিতে সিভিল সার্জন থেকে তিন সদস্যের এবং উপজেলা থেকে তিন সদস্যের পৃথক দুটি টিম গঠন করা হয়েছে। আক্রান্তদের দেওয়া হয়েছে ভিটামিনসহ বিশেষ খাবার। দেখানো হয়েছে পুষ্টি বিশেষজ্ঞ। চমেক হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আক্রান্তদের রোগ, রোগের ধরন ও কারণ নিয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এ-সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। তবে তাদের অবস্থা এখন ভালো। চমেক হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে আইসিডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহমদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আক্রান্তরা পাহাড়ি এলাকার ভাসমান পরিবারের সদস্য। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। লেখাপড়া কম। আছে কুসংস্কারও। তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তারা অপুষ্টিতে ভুগছে। রোগীদের অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। তবে জীবাণু শনাক্ত করতে নমুনা সংগ্রহ করেছি। কিছু নমুনা চট্টগ্রামে এবং কিছু ঢাকায় পরীক্ষা হবে। কয়েক দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এর ওপর ভিত্তি করে তখন চিকিৎসা দেওয়া হবে।’ এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ গতকাল সকালে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ও চমেক হাসপাতালে আক্রান্ত শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পর মনে হচ্ছে, বেশির ভাগ রোগী পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তাদের রক্তশূন্যতা আছে। কিছু রোগীর লিভার বড় আছে। চামড়ায় দানা আছে। একটি-দুটি রোগীর মস্তিষ্কের পর্দা সংক্রমণ বা মেনিনজাইটিস আছে। হামও আছে। সার্বিকভাবে মনে হচ্ছে এটি এক ধরনের সংক্রমণ। পুষ্টিহীনতার কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকায় তাদের মধ্যে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে অনেক সংক্রামক রোগ আছে, যেগুলো দ্রুত একজনের কাছ থেকে অন্যজনে ছড়ায়। পাহাড়ে এক ধরনের রোগ আছে। টাইপাস আছে। হামও আছে। তাদের কী ধরনের সমস্যা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর