শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

আলোয় আসছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

চূড়ান্ত নকশা অনুমোদন। দৈর্ঘ্য হবে ২৪ কিলোমিটার

মানিক মুনতাসির

খুব শিগগিরই আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে প্রস্তাবিত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) প্রস্তুত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সেতু বিভাগ। ডিপিপিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে পুরো প্রকল্পের পাইলের গভীরতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ উড়ালসড়কটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-চন্দ্রা ইন্টারসেকশনে গিয়ে শেষ হবে। এক্সপ্রেসওয়েটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ২৪ কিলোমিটার। এর উভয় পাশে চার লেনের ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কও নির্মাণ হবে।

জানা গেছে, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা ও এর পাশের আশুলিয়া অংশের যানজট নিরসন হবে অনেকাংশে। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমের অন্তত ৩০টি জেলার যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ হবে। উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের ঢাকা ছাড়ার জন্য গাবতলী, সাভার ও চন্দ্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকার প্রয়োজন হবে না। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকা থেকে চন্দ্রা পৌঁছে যাবে এসব গাড়ি। শুধু তাই নয়, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যানজটমুক্ত হবে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা এলাকাও; যার সুফল ভোগ করতে পারবেন রাজধানীবাসীও। প্রকল্পটির নির্মাণ-পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য এটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। চুক্তির শর্তানুযায়ী টোল আদায়ের মাধ্যমে তারা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে নেবে। সেতু বিভাগের একটি সূত্র জানায়, চলতি মাসেই এ প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন করতে চায় সেতু বিভাগ। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এর নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। এ প্রকল্প নির্মাণে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪ শতাংশ সুদে ১০ হাজার ৯৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ঋণ দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থের জোগান দেওয়া হবে সরকারিভাবে। প্রকল্প এলাকায় ৩৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যয় হবে ২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ প্রল্পের জন্য প্রয়োজন হবে ৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এর একটা মোটা অঙ্ক বাজেটে বরাদ্দও রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পের নকশা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই তা অনুমোদন হবে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতোই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় ১০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ র‌্যাম্প থাকবে, নবীনগর ইন্টারসেকশনে থাকবে ১ দশমিক ৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার, বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজন অনুসারে ২ দশমিক ৭২ কিলোমিটার সেতু ও ১৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনাও থাকবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটিতে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের পাশ দিয়ে একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে এ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবটিকে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পিপিপির ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৩ সালে প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালায়। এতে বিমানবন্দর সড়ক থেকে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর ইন্টারসেকশন ও ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা ইন্টারসেকশন পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। পরে দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত সমীক্ষায় এর দৈর্ঘ্য কমিয়ে ২৪ কিলোমিটার করার প্রস্তাব করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর