শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
মুগদা জেনারেল হাসপাতাল

রোগী আছে সেবা নেই

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রোগী আছে সেবা নেই

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত লেগেছে নিয়ন নামে এক যুবকের। আঘাতের স্থান থেকে ঝরছে রক্ত। ঘটনা মুগদা জেনারেল হাসপাতালের কাছে হওয়ায় স্থানীয়রা তাকে দ্রুত সেখানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেই বাধে বিপত্তি। হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রোগীকেই পায়ে সেলাই দেওয়ার জন্য সুই-সুতা এবং ব্যান্ডেজ কিনে আনতে বলেন। হাসপাতাল থেকে কেন দেওয়া হবে না জানতে চাইলে তাদের সঙ্গে রোগীকে নিয়ে আসা দুই ব্যক্তির মধ্যে বাধে বাকবিতণ্ডা। একপর্যায়ে নার্সরা তাদের বলেন, হয় সুই-সুতা কিনে আনেন, নয় তো রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। আহত নিয়নকে নিয়ে আসা লতিফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এই হাসপাতালে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত। ডাক্তারদের সঙ্গে সুবিধা-অসুবিধার কথা বলা গেলেও নার্স আর ওয়ার্ডবয়দের খারাপ ব্যবহারে খুব কষ্ট লাগে। মানুষ বিপদে পড়ে হাসপাতালে আসে আর এরা অসহায় মানুষকে নিয়ে ব্যবসা করে। হাসপাতালে এসব সামগ্রী থাকলেও রোগীদের দিয়ে কিনিয়ে আনা হয়। এই প্রতিবেদক উপস্থিত ওয়ার্ডবয়কে সুই-সুতা এবং ব্যান্ডেজ না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, স্টোরে নেই, শেষ হয়ে গেছে। তার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম দিয়ে আপনার কী কাজ? হয় ওগুলো কিনে আনেন, নয় তো এখান থেকে যান। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অন্য রোগীরা বলেন, এই হাসপাতালের এটা নিয়মিত চিত্র। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে ৯ দশমিক ৫২ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে ৫০০ শয্যার এই হাসপাতাল। এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল রাজধানীর মুগদা, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, ধলপুর, গোবিন্দপুর, রায়েরবাগ এবং উত্তরে বাসাবো, মাদারটেক, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, রামপুরাসহ এই এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু অব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রোগীর তুলনায় জনবল অপ্রতুল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে ওয়ার্ড বেড ৩৬০, আর কেবিন রয়েছে ১৬০টি। আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রয়েছে ১০টি বেড। এ ছাড়াও রয়েছে এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট), সিসিইউ (করোনারি কেয়ার ইউনিট) ও অন্যান্য বিভাগসহ ২০টি আলাদা বিভাগ। তবে এসব বিভাগে নেই পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। রয়েছে টেকনোলজিস্ট ও নার্সের সংকট। পাশাপাশি তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ঘাটতিও রয়েছে বলে জানান তিনি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষ সেবা নিতে আসে এই হাসপাতালে। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আসা মানুষের সংখ্যা প্রায় ১২০০। হাসপাতালে কর্মরত এক নার্স বলেন, মাত্র ১৭৫ জন নার্স মিলে এত রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। বিভিন্ন মানুষ আসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি মানুষকে সেবা দেওয়ার। হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এখানে আইসিইউ, সিসিইউ চালু থাকলেও নেই প্রশিক্ষিত চিকিৎসক এবং নার্স। নিজেদের উদ্যোগে ঢাকার আরও কয়েকটি হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ থেকে কয়েকজন প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন এই হাসপাতালে কাজ করে যাচ্ছেন। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি অ্যান্ড অবস, শিশু বিভাগ, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি, নাক-কান-গলা, চক্ষু বিভাগ, নেফ্রোলজি, ফিজিওথেরাপি, অর্থোপেডিকস, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি, ইউরোলজিসহ প্রায় ২০টি বিভাগ থাকলেও বেশির ভাগ বিভাগে নেই প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বর্তমানে এখানে কর্মরত চিকিৎসক রয়েছেন ১৬২ জন। প্রতিটি বিভাগে আরও তিনজন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার আবেদন করলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এসব সমস্যাকে কর্তৃপক্ষ ভালো চিকিৎসাসেবার অন্তরায় দাবি করলেও সেবা নিতে আসা লোকজন বলছেন, যারা আছেন তারাও সঠিকভাবে সেবা দেন না। হাসপাতালের বহির্বিভাগে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখিয়েছেন লাইজু বেগম। তিনি বলেন, ডাক্তার আমাকে কিছু টেস্ট করাতে বলেছেন। প্যাথলজি বিভাগে গিয়ে দেখি নার্সরা নাস্তা করছেন। এরপর আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে গিয়ে দেখি তারা গল্প করছেন। আমি কাগজপত্র নিয়ে ভিতরে ঢুকলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বের করে দেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ দেওয়ার জন্য হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর