শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ত্রিপুরা পল্লীতে আতঙ্ক বাড়ছে আক্রান্তদের অবস্থার উন্নতি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ত্রিপুরা পল্লীতে আতঙ্ক বাড়ছে আক্রান্তদের অবস্থার উন্নতি

সুজন ত্রিপুরা হারিয়েছেন দুই সন্তানকে। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত অপর তিন সন্তান শয্যাশায়ী হাসপাতালে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও এখন এখানে। হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে সুজন ত্রিপুরা গতকাল দুপুরে হতাশার সুরে বলেন, ‘দুই সন্তানকে হারিয়েছি। এখন আক্রান্ত তিনজনকে নিয়ে হাসপাতালে দিন কাটাচ্ছি। বাড়িতে কেউ নেই। সবার মধ্যেই এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। চিকিৎসাধীন সন্তানের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হলেও মনের ভয় কাটছে না। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরব কিনা তা নিয়েও চিন্তায় আছি।’  

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মধ্যম সোনাইছড়ির ত্রিপুরা পল্লীতে অজ্ঞাত রোগে এক সপ্তাহে ৯ শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেবল ত্রিপুরা পল্লীর ৬৫ পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষের মধ্যেই নয়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রামেও। সোনাইছড়ি ইউনিয়নের অনেক মানুষই অজ্ঞাত রোগ আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।

জানা যায়, ত্রিপুরা পল্লীতে অজ্ঞাত রোগে এক সপ্তাহে ৯ শিশুর মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২২ জন এবং ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এ ৪৩ জনকে ভর্তি করা হয়। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনের অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সকালে তাকে শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) রাখা হয়। তবে দুই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সবারই অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানান দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। গতকাল দুপুরে চমেক হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায়, ভর্তি থাকা ২২ জন আগের দিন চোখ বন্ধ করে থাকলেও গতকাল চোখ খুলে তাদের মা-বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের ধীরে ধীরে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টাও চলছে। চলছে শারীরিক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আক্রান্তদের একজনের অবস্থা একটু খারাপ হওয়ায় তাকে শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। তবে অন্যদের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক উন্নত। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে সবাই সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাদের সার্বিক বিষয় আমাদের পর্যবেক্ষণের মধ্যেই আছে।’ সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘গতকাল নতুন আক্রান্ত হওয়া ৬ জনসহ দুই হাসপাতালে মোট ৬৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ত্রিপুরা পল্লীর কেউ সামান্য অসুস্থতা বোধ করার খবর পেলেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। কারণ ওইখানে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা মিলবে না। তবে এর মাধ্যমে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ বিআইটিআইডি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান চৌধুরী বলেন, এখানে ভর্তি সবার অবস্থা ভালো। তাদের জরুরি চিকিৎসা, ওষুধ, খাবারসহ প্রয়োজনীয় সব সেবা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, ত্রিপুরা পল্লীতে গতকাল সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬৫ পরিবারের মাঝে পুষ্টিকর খাবার বিতরণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন গতকাল সকালে প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, এক লিটার তেল, এক কেজি ডাল, এক কেজি লবণ, দুই কেজি আলু ও ১২টি ডিম দেন। এ ছাড়া, গতকাল দুপুরে চমেক হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎসাধীন সবাইকে পুষ্টিকর খাবার দেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্মিলিত মানবিক জাগরণ (সমাজ)। সংগঠনটির সমন্বয়ক অনুপম দেবনাথ পাভেল বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তিদের হরলিক্স, আপেল, আম, বিস্কুট, পাঁচ লিটার বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর