ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোচিত অনাথ হাবিবা আক্তারের বিয়ে গতকাল রাজসিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এ বিয়ে নিয়ে জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে হৈচৈ পড়ে গেছে। সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে বিয়ের কথা।
বেলা আড়াইটার দিকে হাবিবার বাবার ভূমিকায় থাকা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের উপস্থিতিতে কাজী আবু জামাল হাবিবা-জাকারিয়ার বিয়ে পড়ান। দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১ হাজার টাকা। বিয়েতে উকিল বাবা হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। এর আগে বেলা ১টা ৪০ মিনিটে বরযাত্রী নিয়ে শিশু পরিবারে হাজির হন বর জাকারিয়া আলম। এ সময় আল মামুন সরকার, সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত ও শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা বেগম বরকে বরণ করে নেন। হাবিবা-জাকারিয়ার আলোচিত এ বিয়েতে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে সবাইকে আপ্যায়িত করা হয় পোলাও, গরুর মাংস, মুরগির রোস্ট, টিকা কাবাব, ডিমের কুরমা ও চাইনিজ সবজি দিয়ে। হবু বরকে আস্ত খাসি ও ইলিশ ভাজা দেওয়া হয়। আর এই রান্নার দায়িত্বে ছিলেন বাবুর্চি বাবুল মিয়া। ভোর ৫টা থেকে তিনি তার ছয় জন সহযোগী নিয়ে এই রান্নার আয়োজন করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ সুপারের সরকারি বাংলো থেকে হাবিবাকে তার বর জাকারিয়ার হাতে তুলে দেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী ফারহানা রহমান। এ সময় উপস্থিত থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। হাবিবার বিদায় অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের মৃত্যুর কারণে নির্ধারিত এ সরকারি সফর বাতিল করেন। সন্ধ্যায়ও রাজসিক অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। আপ্যায়নের জন্য ছিল সাদা ভাত, গরুর মাংস ভুনা, মুরগির রোস্ট, ডিমের কুরমা, টাকি মাছ ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ইলিশ মাছ ভাজা, পুঁটি মাছ ভাজা, পাবদা মাছ, মলা মাছ, সবজি, নান রুটি ও চিকেন গ্রিল এবং পায়েশ। উল্লেখ্য, ১০ বছর আগে বাবা-মাকে হারানোর পর হাবিবার ঠাঁই হয় শিশু পরিবারে। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি শিশু পরিবার ছাড়তে হচ্ছিল হাবিবাকে। তাকে পুনর্বাসনের জন্য শিশু পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে তিনি হাবিবাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার চিন্তা করেন। পরে তিনি বিয়ের জন্য ভালো ছেলের সন্ধান পেলে তার চাকরির ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন। এ অবস্থায় হাবিবার জন্য পছন্দ করা পাত্র কসবার সোনাগাঁ গ্রামের জাকারিয়া আলমকে সম্প্রতি জেলা পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন পুলিশ সুপার। পরে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বও নিজ কাঁধে তুলে নেন তিনি। বিয়ের আয়োজনসহ সবকিছুই করেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। বিয়েতে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল সোনার গহনার সেট এবং সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বর-কনের থাকার জন্য ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় স্বর্ণালংকার, টিভি-ফ্রিজসহ নানান আসবাবপত্র।