সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসিতে বদলি নিয়ে বিতর্ক চরমে

কমিশনার সচিব দ্বন্দ্ব

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ রদবদলে যোগ্যদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের বড় পদে বসানোর অভিযোগ উঠেছে। ইসি সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তাই এ রদবদল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক তদবিরেও অনেকের ভালো জায়গায় বদলির অভিযোগ আছে। ফলে মাঠপর্যায়ে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বদলি নিয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব অনেকটা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। এর আগেও কিছু বিষয় নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার ও সচিবের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। এবার কর্মকর্তাদের রদবদল সিইসি ও সচিবের সম্মতিতে হলেও একজন নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে ‘ব্যাখ্যা’ চেয়েছেন সচিবের কাছে। এ নিয়ে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনে অস্বস্তি বিরাজ করছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বদলি বিতর্ক শুধু কমিশন আর সচিবের মধ্যে নয়, মাঠ প্রশাসনেও দ্বন্দ্ব চলছে। জুনিয়র কর্মকর্তাদের বড় পদে বসানোয় আগামীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোয় সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। গত রবিবার চারটি পৃথক আদেশে একযোগে ৩৩ জন কর্মকর্তা রদবদল করে কমিশন সচিবালয়। বদলি আদেশে দেখা গেছে, কুমিল্লার আঞ্চলিক কর্মকর্তার বদলির সময় না হলেও তাকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলামকে অধিকতর জ্যেষ্ঠ পদ রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, নড়াইলের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেখ আনোয়ার হোসেনকে অধিকতর জ্যেষ্ঠ পদ সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে চলতি দায়িত্ব দিয়ে বদলি করা হয়েছে। একইভাবে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠ পদ রাঙামাটি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং মাগুরার শালিখা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠ পদ চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে বদলি করা হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইউও নোট দেন ইসি সচিবের কাছে। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিষয়টি আমাকে কিছুটা বিস্মিত করেছে। কারণ, কোনো পর্যায়েই আমাকে তা অবহিত করা হয়নি।’ ইসি সচিবকে তিনটি বিষয় জানতে চেয়ে এই নির্বাচন কমিশনার লেখেন, নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন কমিটি’ নামে ১২ জুন যে কমিটি গঠিত হয়েছে, এ বদলি-পদোন্নতি তার কার্যপরিধির আওতায় পড়ে কিনা; এ কমিটির সভায় তা আলোচিত হওয়া উচিত ছিল কিনা ও কমিটিকে অবহিত করা না হলে কমিটির আবশ্যকতা থাকে বলে প্রতীয়মান হয় না। তিনি জানতে চান, কোন নিয়মনীতি অনুসরণ করে তা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে যাবতীয় নির্দেশ, আদেশ ও অন্যান্য নথিপত্র তার কাছে দ্রুত পেশ করার পরামর্শও দেন ইসি মাহবুব তালুকদার।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইউও নোটের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি সচিব ও অতিরিক্ত সচিব বুধবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইসি কর্মকর্তারা বলেন, মাঠ কর্মকর্তাদের বদলি-পদোন্নতির পর তিনি (মাহবুব তালুকদার) ইউও নোট দিয়েছেন। এটা নিয়ে সাময়িক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তার কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি, এখন আর কোনো অসুবিধা হবে না। তিন বা তার বেশি সদস্যের নির্বাচন কমিশনে অতীতে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের সচিব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সর্বশেষ কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ স্মার্টকার্ড প্রকল্প ও এ টি এম শামসুল হুদা কমিশনে ইসি সচিবালয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে সাময়িক বিরোধ দৃশ্যমান হয়েছে। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসিতেও বিরোধ দেখা দিয়েছে এবং ‘অস্বস্তি’ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইসি সচিবালয়ের প্রশাসনিক বদলির কার্যক্রম একজন নির্বাচন কমিশনারের কার্যপরিধির মধ্যে পড়ে না। বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে কমিটির প্রধানকে না জানিয়ে বড় ধরনের রদবদল করা ও নির্বাচন কমিশনারের অজ্ঞাতে এটা হয়ে থাকলে তা সঠিক হয়নি মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, একজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে যেহেতু একটি কমিটি করা হয়েছে, সেহেতু রদবদলের বিষয়টি তাকে অবহিত করাটাই উচিত ছিল। নির্বাচন কমিশন একটি একক সত্তা। সব সদস্য মিলেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখানে একটি ভুল নিয়ে অন্যকে সুযোগ দেওয়ার অবকাশ নেই। এতে কমিশন সম্পর্কে জনগণ ভুল বার্তা পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর