সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জনশক্তি রপ্তানি কমছে ভরসা সৌদি মালয়েশিয়া

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গেছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার লোক। এই সংখ্যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ কম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ৬ লাখ ৮৫ হাজার শ্রমশক্তি রপ্তানি হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে ওই সময়ের চেয়ে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের নয় মাসে প্রায় তিন লাখ লোক কম গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের উঠানামার অন্যতম কারণ হচ্ছে— বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যে দরপতন, মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক ও অঞ্চলভিত্তিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শ্রমশক্তি রপ্তানিতে বিভিন্ন দেশের বিধিনিষেধ আরোপ ইত্যাদি। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক টানাপড়েন আর তেলের দামের নিম্নমুখী প্রভাব থাকার পরও জনশক্তি রপ্তানির দিক থেকে এখনো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বিশেষ করে সৌদি আরব বাংলাদেশিদের প্রধান গন্তব্যস্থল। ওই অঞ্চলের বাইরে এখনো মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরই বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের ভরসা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক চিফ ইকোনমিস্ট এম কে মুজেরি বলেন, জনশক্তি রপ্তানির জন্য আমাদের নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মার্কেটে যে ধরনের কাজের চাহিদা বাড়ছে সে অনুযায়ী কর্মক্ষম জনশক্তি তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিআইডিএস’র সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, যেহেতু মধ্যপ্রাচ্য আমাদের শ্রম রপ্তানির অন্যতম গন্তব্য, তাই ওই অঞ্চলের পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জনশক্তি রপ্তানির একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দেখা যাচ্ছে ওই দেশগুলোতে আমাদের গৃহকর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে, কিন্তু এই কাজে কিছু সামাজিক সমস্যাও রয়েছে।

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ লোক কাজ করছে। বিগত ১০ বছরের জনশক্তি রপ্তানির গতিধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সর্বাধিক ৯ লাখ ৮১ হাজার লোক বিদেশে যায়। এর পরের দুই বছর জনশক্তি রপ্তানির হার হ্রাস পেলেও ২০১১ থেকে আবার বাড়তে থাকে। ২০১৩-১৪-তে আবার কিছুটা কমে যায়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৬২ লাখ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৮৫ লাখে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির দিক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব শীর্ষে। নয় মাসে প্রায় ২২ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমশক্তি রপ্তানি হয়েছে তেল সমৃদ্ধ ওই দেশটিতে। এরপরই রয়েছে ওমান, মোট রপ্তানির ২২ দশমিক ৩ শতাংশ গেছে সেখানে। এরপর মোট জনশক্তির ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ কাতারে, ১১ দশমিক ৬ শতাংশ বাহরাইন, ৭ দশমিক ৪ শতাংশ কুয়েত, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ সিঙ্গাপুর, ৩ দশমিক ৯ শতাংশ মালয়েশিয়া, ১ শতাংশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য দেশে ১১ দশমিক ১ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৭-এর তথ্য অনুযায়ী গড়ে ৭০ শতাংশের বেশি জনশক্তি রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সৌদি আরবে প্রায় ২ দশমিক ২৬ লাখ লোক যাওয়ার পর ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সেখানে জনশক্তি রপ্তানি প্রায় বন্ধ ছিল। অর্থবছর ২০০৯ হতে অর্থবছর ২০১৫ পর্যন্ত সাত বছরে দেশটিতে মাত্র ১ লাখ ১৭ হাজার লোক যায়। গত বছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে সৌদি আরবে প্রায় ২ লাখ ৪৮ হাজার লোক গেছে। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে মালয়েশিয়ায় গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২ লাখ ২৭ হাজার জনশক্তি রপ্তানি হয়। এরপর ২০০৯-১০ সাল থেকে ২০১৫-১৬ পর্যন্ত সেখানে শ্রম রপ্তানি প্রায় বন্ধ থাকে। অর্থবছর ১০ থেকে অর্থবছর ১৫ পর্যন্ত ৬ বছরে মাত্র ১৬ হাজার ৩২৭ জন লোক যায় সেখানে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শ্রম রপ্তানি কিছুটা বেড়ে ৫১ হাজার ১২৯ জনে দাঁড়ায়। সিঙ্গাপুরে জনশক্তি রপ্তানিতে মিশ্রধারা দেখা গেছে। বিগত ১০ বছরে জনশক্তি রপ্তানিতে অস্থিরতা বিরাজ করলেও সিঙ্গাপুরে স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। অর্থবছর ২০১০ হতে অর্থবছর ২০১৩ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে জনশক্তি রপ্তানি আগের বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা বেড়ে ৬০ হাজার ৩৫৫ জনে দাঁড়ায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৮ হাজার ৫৫৮ জন লোক গেছে দেশটিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর