সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জালিয়াত চক্রের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা, টাকা পেতে হয়রানি

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে জমি অধিগ্রহণ

নিজামুল হক বিপুল

রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকরা পড়েছেন প্রতারক চকের খপ্পরে। সরকার অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা দিয়ে দিলেও প্রকৃত মালিকরা সে টাকা পাচ্ছেন না। অনেকের নামে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চেক ইস্যু হওয়ার পরও জালিয়াত চক্রের তৎপরতার কারণে সেই চেক ড্র করতে পারছেন না প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা। উল্টো সেই চেক আটকে দিয়ে জালিয়াত চক্র নিজেদের নামে জাল দলিল তৈরি করে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত দাবি করে ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূমি অধিগ্রহণের সঙ্গে জড়িত কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব অনিয়মে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়ালসড়ক নির্মাণের জন্য সরকার বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণকৃত সেই জমির ক্ষতিপূরণের টাকাও সরকার ঢাকা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অফিসের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করে। ডিসি অফিস গত বছরই অধিগ্রহণকৃত ক্ষতিপূরণের টাকা প্রকৃত ভূমি মালিকদের দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। অনেকের নামেই চেক ইস্যু করে ডিসি অফিস। কিন্তু চেক ইস্যুর পর সেই চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়েই অনেক ভূমি মালিকের মাথায় হাত পড়ে। ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ইস্যুকৃত চেকের বিষয়ে ডিসি অফিসের এলএ-৪ শাখার আপত্তি আছে। এ কারণে আপাতত টাকা দেওয়া যাবে না। ভুক্তভোগীদের একজন কারওয়ান বাজার এলাকার আবদুর রহিম অভিযোগ করে বলেন, তার ০.০২৭২ অযুতাংশ জমি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য অধিগ্রহণ করে সরকার। তেজগাঁও শিল্প এলাকা মৌজার সিটি দাগ-৭৫১৮ এর ওই জমির মূল্য ধরে ডিসি অফিস থেকে গত বছর ২০ অক্টোবর চেক ইস্যু করা হয় (নম্বর-০১৭৪৯৮৫)। সিএস/এসএ/আরএস ও সিটি জরিপে আবদুর রহিম ওই জমির প্রকৃত মালিক নিশ্চিত হওয়ার পর ডিসি অফিসের এলএ শাখা থেকে চেকটি ইস্যু হয়। কিন্তু চেক ভাঙাতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। ব্যাংক থেকে জানানো হয়, আপত্তি আছে। এরপর ৩০ অক্টোবর এলএ শাখা থেকে চেক বাতিল করার জন্য ব্যাংককে পত্র দেওয়া হয়। ফলে গত নয় মাসেও তিনি টাকা উত্তোলন করতে পারেননি। রহিম অভিযোগ করেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে এলএ শাখায় যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয়, এ জমির ওপর সুরাইয়া বেগম গং আপত্তি জানিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, ওই জমির মালিক তারা। চেক প্রদানের ৯ দিন পর ২৯ অক্টোবর সুরাইয়া বেগম গং ওই চেকের ওপর নামজারি ১২৫৪/১৫-১৬ আপত্তি দাখিল করেন। পরে ১২ ডিসেম্বর সুরাইয়া বেগমের ওই আপত্তি বাতিল হয়ে যায় সপক্ষে কোনো দলিলপত্র দেখাতে না পারায়। এরপর সুরাইয়া বেগম গং সহকারী কমিশনার তেজগাঁও সার্কেলে আলাদা মৌজা, দাগ ও দলিল দেখিয়ে ভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ওই জমি ক্রয় করেছেন মর্মে নামজারিতে আপত্তি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মির্জা মুরাদ বেগ আবদুর রহিমের চেকটি বাতিল করেন। পরে আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য উভয় পক্ষকে এলএ শাখা-৪ থেকে নোটিস করা হয়। রহিম তার কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হলেও সুরাইয়া বেগম গং উপস্থিত হননি। এরপর আপত্তিকারীদের বিরুদ্ধে রহিমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তিকারীদের নামজারি অসত্য প্রমাণিত হওয়ায় ৩০ এপ্রিল সেটিও বাতিল হয়। রহিমের অভিযোগ, বারবার জালিয়াত চক্রের আপত্তি বাতিল হলেও তারা একের পর এক আপত্তি জানিয়ে তার ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার রাস্তা রুদ্ধ করে রেখেছে। সর্বশেষ সুরাইয়া গং মিস আপিল করেছেন (নং-৬২৩/১৭)। এই আপিলে তারা জমির দলিল দেখিয়েছেন ৪৮৭০/৮৩ ও ১০৫৩৫/৮০, যা বর্তমানে ঢাকা জেলার এডিসি (রাজস্ব)-এর কাছে আছে। রহিম জানিয়েছেন, তার জমির দলিল নম্বর হচ্ছে ৫০১৩/৭০। দাগ নম্বর হচ্ছে ৭৫১৮।

তিনি বলেন, প্রকৃত মালিক হিসেবে ডিসি অফিস থেকে চেক পাওয়ার পরও নয় মাস ধরে তাকে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

শুধু রহিম নয়, কারওয়ান বাজার. তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী এলাকায় অধিগ্রহণের শিকার প্রকৃত ভূমি মালিকদের অনেকেই জালিয়াত চক্রের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জানা গেছে, জালিয়াত চক্র জাল দলিল তৈরি করে নিজেদের ভূমি মালিক দাবি করে ডিসি অফিসের এলএ শাখা এবং স্থানীয় ভূমি অফিসগুলোতে আপত্তি জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত ভূমি মালিকদের টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাগড়া দিচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভাঙিয়ে তদবিরও করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর