সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
আন্তবিভাগীয় সমন্বয় সভা

জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল উদ্ধার ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীতে চিহ্নিত খাল বেদখল, ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ও আবর্জনার কারণে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। এ সমস্যা নিরসনের জন্য দ্রুত খালগুলোকে দখলমুক্ত করতে হবে। সঙ্গে খালের গভীরতা, পরিচ্ছন্নতা ও একটি সমসাময়িক মাস্টার প্ল্যান গ্রহণের জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। গতকাল গুলশান-২ সেন্টার পয়েন্টে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তবিভাগীয় সমন্বয় সভায় উপস্থিত বক্তারা এসব পরামর্শ দেন। পরে সংশ্লিষ্ট কাজ সম্মিলিতভাবে দ্রুত সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন ওইসব সংস্থার প্রধানরা। এতে রাজধানীর সব সেবা সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। মেয়র আনিসুল হকের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপি। অনুষ্ঠানে মেয়র আনিসুল হক বলেন, সম্প্রতি নগরীর জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যার জন্য সবাই সিটি করপোরেশনকে একক দায়ী করে থাকেন। এ সমস্যা নিরসনে সিটি করপোরেশনের কতটুকু করণীয় এবং সমস্যা নিরসনে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা নির্ধারণ করতে হবে।  বক্তব্য সবার জন্য উন্মুক্ত করা হলে উত্তর সিটির কাউন্সিলরদের তোপের মুখে পড়েন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম এ খান। তিনি দাবি করেন, নিয়মিতভাবে খাল পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু খালের মধ্যে জমে থাকা মাটি উঠানোর দায়িত্ব ওয়াসার নয়। একাধিক কাউন্সিলর তাদের বক্তব্যে অভিযোগ করেন, যেসব এলাকায় সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা থাকেন সেখানে ওয়াসার লোকেরা খাল ও ড্রেন পরিষ্কার করেন। আবার কোথাও ড্রেন থেকে ময়লা তুলে পাশে রেখে তারা চলে যান। খালগুলোতে ওয়াসা কচুরিপানা পরিষ্কার করে, এ ছাড়া আর কিছুই করে না। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি মাস্টার প্ল্যান করতে হবে। ওয়াসার কাছে যে মাস্টার প্ল্যানটি আছে তা রিলেভেন্ট (সম্পর্কিত) না। ঢাকা সিটিতে প্রতিদিন বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ৮ হাজার টন বর্জ্য বের হয়। সব কিছুই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে হয় সিটি করপোরেশনকে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য বাসাবাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্ক স্থাপনের জন্য পূর্ত মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি নাগরিকসেবা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর লিড এজেন্সি হওয়ার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে আহ্বান জানান। জবাবে মেয়র আনিসুল হক জানান, লিড এজেন্সি হতে তার কোনো আপত্তি নেই। এর জন্য সরকারি কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে তা সম্পন্ন করতে হয়। তার আগে জলাবদ্ধতার জন্য স্বল্পমেয়াদি সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে।এর আগে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী শরিফ হোসেন নগরীর সার্বিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীতে ৪৩টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ওয়াসা রক্ষণাবেক্ষণ করে ২৬টি খাল। বিকল্পভাবে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৯টি এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৮টি খাল। কালশীর সাংবাদিক কলোনির খালটির প্রশস্থ ছিল ১৪ ফুট, সেটি দখল হয়ে এখন আছে ৪ ফুট। প্যারিস খাল ২৫ ফুটের স্থলে আছে ৫ ফুট। বাইশটিকি খাল ৩০ ফুটের স্থলে আছে ৫-৭ ফুট। বাউনিয়ার ৬০ ফুটের খালটিও বিভিন্ন স্থানে ভরাট করার ফলে আছে মাত্র ৭-১০ ফুট। মহাখালীর নাখালপাড়ার খালটি দখল ও আবর্জনায় ছোট হয়ে গেছে। মিরপুর শেওড়াপাড়ার খাল ৬০ ফুটের খালটি চেনার উপায় নেই। মাজার রোডের খালটি অস্তিত্ব সংকটে। কাটাসুর খালের দুই পাশ ঘরবাড়িতে দখল হয়ে গেছে। রামচন্দ্রপুর খালটি অনেকটা বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে। এসব খালের মালিকানায় রয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে ঢাকা ওয়াসা। বেদখল খাল উদ্ধারের বিষয়ে মেয়র ঢাকার জেলা প্রশাসক সালাহ উদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে অবৈধ দখলদারদের একটি তালিকা করে সিটি করপোরেশনকে দিয়েছি। বেদখল খাল উদ্ধারের জন্য সম্মিলিতভাবে অভিযান চালাতে হবে, এর জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বেদখল খাল উদ্ধার করা কোনো কঠিন কাজ নয়। আর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবর্জনা পরিষ্কারের বিষয়ে যা বলছেন তাও ঠিক নয়। অর্থাৎ আপনি পানির ওপর দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করবেন, কিন্তু কাদাপানি তুলবেন না, এটা হতে পারে না।

 বেদখল খাল উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করা প্রয়োজন। পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেক দিনের। কিন্তু আমরা তার সমাধান দিতে পারিনি। নিকুঞ্জ এলাকার যে দুটি স্লুইস গেটের সমস্যার কথা বলা হয়েছে তা আমি দ্রুত সমাধান করার ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া ঢাকার খালগুলোকে দ্রুত দখলমুক্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে অন্য খালগুলোকে দখলদারদের হাত থেকে রক্ষার জন্যও এটি করা প্রয়োজন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ বলেন, সিডনি আর ঢাকার চারপাশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও নদী নেই। ঢাকা জেলা প্রশাসককে সঙ্গে নিয়ে খাল উদ্ধার করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। নগরীর সমস্যা সমাধানের জন্য সব সেবা সংস্থাকে এক জায়গায় আনতে হবে।

সমন্বয় সভায় স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, মুজিবুর রহমান, আখতার মাহমুদ ও ইকবাল হাবিবসহ চারজন নগর বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যে মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ঢাকায় ৪৩টি নয়, আসলে ৫৪টি খাল আছে। আমাদের এখানে মানুষ আছে, কাজ আছে। সেগুলোকে একত্র করতে পারলে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যে সেবা সংস্থা রয়েছে সেগুলোকে সিটি করপোরেশনের আওতায় নিতে হবে। এ ছাড়া নগরীর নতুন নতুন ভবনের আঙিনা উঁচু করা হচ্ছে, ফলে তাদের বৃষ্টির পানি রাস্তায় এসে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। মুজিবুর রহমান বলেন, খালগুলোকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে নিতে হবে। আখতার মাহমুদ বলেন, এ বছর ৪০-৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ঢাকা ডুবেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বেদখল খাল উদ্ধার ও তা রিটেইনিং এলাকার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। ইকবাল হাবিব বলেন, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য একটা মাস্টার প্ল্যান করা জরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর